ঢাকা: হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে একটি পেট্রল পাম্প দখলের অভিযোগ উঠেছে রাজউক কর্মচারী বহুমুখী সমিতি লিমিটেডের বিরুদ্ধে।
রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই পাম্পের মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই অভিযোগ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কসমো ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড সার্ভিস সেন্টারের স্বত্বাধিকারী ও সাব-লিজ গ্রহণকারী গাজী আব্দুর রব।
লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী গাজী আব্দুর রব বলেন, রাজউক কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে পেট্রল পাম্পের ওপর দুই বিঘা জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই জায়গার মধ্যে সমিতি ১৩ কাঠা জায়গা আমাকে সাবলিজ দেয় এবং আমার নিজ খরচে পেট্রল পাম্প নির্মাণের জন্য চুক্তি সম্পাদন করে। অবশিষ্ট এক বিঘা সাত কাঠা জায়গার মধ্যে রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স তৈরি করে।
তিনি বলেন, চুক্তিটি সম্পাদন হয় ১৯৯৭ সালে এবং নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে পাম্পটি চালু করা হয় ২০০০ সালে। এরইসঙ্গে পাম্পের ২৫ বছর মেয়াদ শুরু হয় এবং ভাড়া দেওয়া শুরু হয়। সেই অনুযায়ী রাজউক কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ৮ মার্চ। চুক্তিতে উল্লেখ আছে যে, বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে পরে আবার পূর্ববর্তী এবং তখনকার বর্তমান ভাড়ার মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে চুক্তিপত্র নবায়ন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই মেসার্স কসমো ফিলিং স্টেশন পেট্রল পাম্প ও কার সার্ভিসিং সেন্টার রাজউক কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে জজ কোর্টে সালিশি মামলা দায়ের করা হয়।
গাজী আব্দুর রব বলেন, মামলা চলাকালে আইন অমান্য করে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে আমি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হই। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে ডিভিশন গত ৬ এপ্রিল নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু জজ কোর্ট ও হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে সেদিনই রাজউকের জোন-৩ এর পরিচালক তাজিনা সারোয়ার পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স নিয়ে রাজউক কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি জাহাংগীর হোসেইন ও সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ বাবুর অবৈধ প্রভাবে মেসার্স কসমো ফিলিং স্টেশন পেট্রল পাম্প ও কার সার্ভিসিং সেন্টার জোর করে দখলের চেষ্টা চালান।
তিনি বলেন, অভিযানে প্রথমেই ম্যানেজারের মুঠোফোনটি কব্জা করে নেওয়া হয় যেন তিনি কারো সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সম্পর্কে কাউকে জানাতে না পারেন। এরপর সিসি ক্যামেরা ও বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয় এবং অনেকক্ষণ ধরে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন অংশের ভাঙচুর করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডের কোনো বৈধ আদেশ আছে কি না, তা দেখতে চাওয়া হলে তারা বিষয়টি গ্রাহ্য করেননি এবং লিগ্যাল ডকুমেন্ট দেখাননি। বরং তাদের এ বিষয়ে আরও কিছু জিজ্ঞাসা করা হলেই গ্রেপ্তার করা হবে বলে হুমকি দেন। ঘটনাস্থলে সমিতির সদস্যরা আমার প্রতিষ্ঠানের স্টাফদের সঙ্গে নানা কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন এবং দুর্ব্যবহার করে স্টাফদের অপমান করেন। আমার পাম্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বারবার আদালতের নিষেধাজ্ঞার কপি দেখাতে চাইলেও তারা তা আমলে নেননি।
গাজী আব্দুর রব বলেন, এই সময়ে তাজিনা সারোয়ারকে আদালত থেকে ই-মেইল করা হয় এবং ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে চারপাশের টিনের বেড়া দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি জোরপূর্বক ঘেরাও করে দেন। এতে প্রতিষ্ঠানটির কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয় এবং এত বছরের অর্জিত সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়, যা আর্থিকভাবে পরিমাপের অযোগ্য।
তিনি বলেন, ৬ মাস আগেও রাজউক বহুমুখী সমবায় সমিতি ফিলিং স্টেশন দখলের চেষ্টা চালায়। তবে সে সময় ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ আদালতের স্টে-অর্ডার দেখিয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। এরপর আবার এমন কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। বর্তমানে সেন্টারে আমার ৬০ জন কর্মচারী আছেন, যারা এই ঈদের আগে বেকার হয়ে পড়েছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় কয়েক কোটি টাকার রির্জাভ জ্বালানি রয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা রাজউক চেয়াম্যান ও প্রধান বিচারপতিসহ সবার কাছে ন্যায় বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
এইচএমএস/আরএইচ