ঢাকা, বুধবার, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদে উত্তরের যাত্রায় বগুড়া মহাসড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
ঈদে উত্তরের যাত্রায় বগুড়া মহাসড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: বগুড়াকে বলা হয়ে থাকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার। এ জেলায় যুক্ত প্রায় ১৪০ কিলোমিটার মহাসড়ক।

এরমধ্যে ঢাকা-বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক ৬৪ কিলোমিটার, বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক ৩০ কিলোমিটার ও বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়ক ৪০ কিলোমিটার।

ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণে গৃহীত ‘সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক)-২’ প্রকল্পের আওতায় বগুড়া অংশে পড়েছে ৬৪ কিলোমিটার মহাসড়ক। যার কাজ এখনও চলমান। ফলে কাজ শেষ না হওয়ায় এবার ঈদযাত্রায় উত্তরের এগারোটি জেলার যাত্রীদের ভোগান্তি পোহানোর আশঙ্কা করছেন চালকেরা।

রোববার (০৯ এপ্রিল) বগুড়ার মহাসড়ক ঘুরে ও চালকদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র উঠে আসে।

বগুড়া মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ে দিনে যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করে, ঈদে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে কয়েকগুণ। বর্তমান অবস্থায় যানবাহনের চাপ আর রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজের ধীরগতি থাকার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এছাড়াও মহাসড়কে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অবৈধ চলাচলের কারণে বগুড়া জেলার সীমানায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানবাহনের গতি ধীর হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ঈদ যাত্রায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি হলে তা যানজটে পরিণত হতে পারে। আর এতে করে ঈদে উত্তরের ঘরমুখো যাত্রীদের পোহাতে হতে পারে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি।

তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও হাইওয়ে পুলিশের দাবি, বগুড়া অংশে এবার থাকবে না কোনো দুর্ভোগ। ইতোমধ্যেই তারা দুর্ভোগ সৃষ্টি হতে পারে এমন সব এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে দ্রুত কাজ করছেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সেসব এলাকার কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা তাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনার পর মহাসড়কের বগুড়া জেলা সীমানার ৬৫ কিলোমিটার অংশের মধ্যে ৮ থেকে ১০টি পয়েন্টে (উল্লেখযোগ্য- শেরপুর উপজেলার ধুনট মোড়, শেরপুর শহর, বগুড়া শহরের প্রবেশমুখ বনানী, ফুলতলা, তিনমাথা রেলগেট, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, শহরের মাটিডালি বিমান মোড় ও বাঘোপাড়া) যানজট পরিস্থিতি কখনও কখনও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সড়কের বেশ কিছু লেনের অবস্থা ভালো নয়। নির্মাণাধীন ফোর লেনের অনেক স্থান এক লেনে গিয়ে মিলিত হওয়ায় তৈরি হয়েছে বাঁক। সেসব জায়গায় গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পারায় ধীর গতিতে চলতে হচ্ছে।

বগুড়ার চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, শেরপুর বাসস্ট্যান্ড, মির্জাপুর এলাকায় দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে ধীরগতিতে চলতে হচ্ছে। ধুনট মোড় এলাকাতেও একটি শাখা সড়ক ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে সেখানেও যানজট লেগেই থাকছে। অন্যদিকে শহরের তিনমাথা রেলগেট এলাকায় ওভারপাসের নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় চলাচলরত দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে থেমে থেমে চলতে হচ্ছে। এছাড়া শহরের বনানী ও মাটিডালি এলাকায় সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো মহাসড়ককে স্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রীদের ওঠানো ও নামানোর কারণে যানজট লেগেই থাকছে।

সাসেক-২ সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে বগুড়া অংশে কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে কাজ প্রায় বন্ধই ছিল। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে আবারও কাজ শুরু হয়। এ সময়ের মধ্যে বগুড়া শহরের উত্তরাংশের গোকুল থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার এবং দক্ষিণ দিকে শেরপুর উপজেলা সীমানায় মির্জাপুর, নয়মাইল এবং আরডিএ এই তিন পয়েন্টে চার কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করে তা যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৯ কিলোমিটার এলাকার কোথাও দুই লেন, কোথাও আগের সড়ক দিয়েই যান চলাচল করছে।

সাসেক-২ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, এই প্রকল্পের আওতায় বগুড়া অংশে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা ছাড়াও বগুড়া শহরের তিনমাথায় একটি ওভারপাস (নিচ দিয়ে ট্রেন চলবে) এবং ১১টি আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে বারপুর ও মহাস্থান এলাকায় আন্ডারপাস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। অন্য ৯টির মধ্যে শহরের চারমাথা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল আন্ডারপাসের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এছাড়া শেরপুর উপজেলার ছোনকা ও মির্জাপুরে আন্ডারপাসের মূল কাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে শেরপুর উপজেলার চান্দাইকোণা ও গাড়িদহ, শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া ক্যান্টনমেন্টের বি-ব্লক ও জাহাঙ্গীরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট, সদর উপজেলার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আন্ডারপাসের নির্মাণকাজ এখনও শুরু করা হয়নি।

সজিব হাসান, একরামুল কবির, আরিফুল ইসলাম নামের বাস চালকেরা বাংলানিউজকে জানান, প্রতি বছর ঈদ এলেই এ মহাসড়কের কিছু কিছু পয়েন্টে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীসহ তাদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এখনও ঈদ যাত্রা শুরু হয়নি। মহাসড়ক প্রশস্তকরণ কাজ চলমান থাকার কারণে এখনই কিছু স্থানে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। চলতে হচ্ছে ধীরগতিতে। আর ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে বাড়তি যান চলাচল শুরু হবে। তখন বাসের সংখ্যাও বেড়ে যাবে। এতে এসব পয়েন্টে যানজট ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিওনের পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যেন মহাসড়কে চলাচল করতে না পরে, সেজন্য তাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। মহাসড়কের চলমান কাজের কারণে যেন কোথাও কোনো দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় এজন্য সাসেক-২ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। যেসব এলাকায় দুর্ভোগের শঙ্কা রয়েছে, সেসব এলাকায় তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া ঈদ যাত্রায় মহাসড়কের কোথাও যেন কোনো যানজটের সৃষ্টি না হয়, সেজন্য জেলা পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের সহায়তায় তারা তৎপর থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২৩
এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।