ঢাকা: বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা সময়ে চেয়ে-চিন্তে টাকা সহযোগিতা নিতেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা (হিজড়া)। এবারও ঈদের আগে টাকা সহযোগিতা নেওয়ার কথা ছিল তাদের।
এবার ঈদে কোনাকাটা না করে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ২০ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছেন সারা দেশের হিজড়া সম্প্রদায়।
রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের স্থলে কয়েকশ হিজরা উপস্থিত হয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হাতে এ সহায়তার টাকা তুলে দেন।
সহায়তা দেওয়ার পর হিজড়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশ্মির দিপালী হিজড়া বলেন, বহু বছর ধরে আমরা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি। আজকে তারা বিপদে পড়েছেন। তাই আমরা চিন্তা করেছি এবার ঈদের কেনাকাটা না করে, সেই অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দিবো।
তিনি বলেন, আমরা সারা দেশের হিজড়ারা একত্রিত হয়ে ২০ লাখ টাকা তুলেছি। সেই টাকা আজ এখানে তাদের (ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী) হাতে তুলে দিয়েছি। ব্যবসায়ীরা বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবো।
হিজড়াদের গুরুমা রাখি শেখ বলেন, আমরা মানুষের কাছ থেকে এক দুই টাকা করে উঠিয়ে উঠিয়ে এই টাকা জমিয়েছি। এখন আমরা সেটা মানবতার কল্যাণেই দিয়ে দিবো। এ টাকা কোনো ব্যবসায়ীর হাতে হাতে দেওয়া হবে না। পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা তহবিলে জমা দেওয়া হবে। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাতে হাতে এ টাকা পৌঁছে যাবে।
হিজড়াদের এ সহায়তাকে মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ উল্লেখ করে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আজ হাতে পাওয়া টাকার মধ্যে সবচেয়ে আনন্দদায়ক হলো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ২০ লাখ টাকার সতায়তা। এটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে মানবতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এ কারণে আমরা ব্যবসায়ী ভাইদের অনুরোধ করবো, তাদের যেন কখনো অবহেলার চোখে না দেখা হয়। এখন থেকে আমরা হিজড়া জনগোষ্ঠীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবো।
এ সময় গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল মেয়র তানিয়া হক শোভা, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নামজুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরা এলাকার হিজড়াদের সরদারনী আলেয়া হিজড়া ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দুই লাখ টাকা সহায়তা দেন। তিনি এ টাকা হজের জন্য জমিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৪১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এরপর ৪৩টি ইউনিট যাওয়ার খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ৪৮টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টায় দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকালে আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপনের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।
আগুনে বঙ্গবাজার এলাকার মোট সাতটি মার্কেট পুড়ে গেছে। এর মধ্যে চারটি পুরোপুরি ও তিনটি আংশিক। মার্কেটগুলো হলো- বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেট, বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্স, বঙ্গবাজার মার্কেট, এনেক্সকো টাওয়ার, মহানগর শপিং কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট, গুলিস্তান মার্কেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৩
এসসি/আরআইএস