বরিশাল: বরিশালের মুলাদীতে প্রতিপক্ষের হামলায় দুজন নিহতের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে বাটামারা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আলম বেপরীকে আটক করা হয়েছে।
অন্যদিকে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো হত্যা মামলা দায়ের করা না হলেও সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর সেই মামলায় জামাল সরদার নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তুষার কুমার মন্ডল বুধবার (১২ এপ্রিল) বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে দুই ব্যক্তির মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো পরিবারের পক্ষ থেকেই এখন পর্যন্ত থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবার মামলা না দিলেও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ আইনি পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, পুলিশ যেকোনো কাজই সাধারণ ডায়েরির ওপর ভিত্তি করে করে। নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। পরিবার যদি মামলা না দেয় তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরাও বাদী হয়ে মামলা দিতে পারবো। সে ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দেবে।
ওসি তুষার কুমার মন্ডল বলেন, আমরা পুরো ঘটনার মধ্যে সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছি। আর সেই মামলায় জামাল সরদার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাটামারা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আলম বেপারীকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আলম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
নিহত আলমগীর কবিরাজের ছেলে সোহরাব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মেম্বার আলমসহ হাওলাদার ও হাজী গ্রুপ সফিপুর ও বাটামারা এলাকায় একটি দল তৈরি করেছেন। আলম সেই দলের প্রধান, তারা এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে, মানুষকে মারধর করে, চাঁদাবাজি করে।
নিহত আলমগীরের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, হামলাকারীরা এতই বেপরোয়া যে, পুলিশের উপস্থিতিতে সোমবার হামলার ঘটনায় ঘটায় এবং সুস্থ দুজন মানষুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে।
আরেক নিহত হেলাল বেপারীর বড় বোনসহ স্বজনরাও বলছেন, পুলিশের উপস্থিতিতে তিনজনকে ধরে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এর মধ্যে হেলাল ও আলমগীরের মরদেহ পাওয়া গেলেও সন্ধান মিলছে না নিহত হেলালের ভাই কবিরের।
যদিও স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, কবির বেপারীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মাদারীপুরের কোনো একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। অজানা ভয়ে তাকে প্রকাশ্যে আনতে চাচ্ছেন না স্বজনরা।
বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাটামারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মজিবুর রহমান সরদার।
পুলিশের দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় সোমবার পৌনে ৩টার দিকে মুলাদী উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের উত্তর বালিয়াতলী এলাকায়। ওইদিন মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুষার কুমার মন্ডল ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সমীর কুমার দাসের নেতৃত্বে বাটামারা ও সফিপুর ইউনিয়নে নিয়মিত মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার ও মাদক উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বাটামারা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের এসআই বেল্লাল হোসেন মাতুব্বর ও সফিপুর পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই এনায়েত ফোর্সসহ অভিযানে উপস্থিত ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সদস্যরা বেলা পৌনে ৩টার দিকে সফিপুর ইউনিয়নের উত্তর বালিয়াতলী এলাকার জামাল সরদারের বাড়িতে অভিযান চালান।
গ্রেপ্তার এড়াতে আসামিরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। আসামিদের লাঠি এবং ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কনস্টেবল মো. নাঈম আহত হন। পরে আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি বোমা বিস্ফোরণ ঘটান। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে শর্টগান দিয়ে ৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় আসামি জামাল সরদারকে (৫৫) গ্রেপ্তার করা হয়।
এর বাইরে পুলিশের এজাহারে আর কোনো তথ্য না থাকলেও ওই ঘটনায় ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৪০/১৫০ জনকে আসামি করে বাটামারা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের এসআই বেল্লাল হোসেন মাতুব্বর মুলাদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছেন, সোমবারের ঘটনার আগে আলম মেম্বারের মাধ্যমে হাজী-হাওলাদার গ্রুপের দাদন হাওলাদারসহ অন্যান্যরা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেই এলাকায় আসেন। ঘটনার দিন মাদকবিরোধী বা অন্য কোনো অভিযানের বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনেকেই জানতেন না। তাই এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৩
এমএস/এমজেএফ