ঢাকা: যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণ বিস্ময়ের ব্যাপার বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু গণভবনে যেভাবে শপথগ্রহণ করেছিলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল একেবারে যুদ্ধরত অবস্থায় আমাদের প্রথম সরকার একইভাবে শপথ নিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রোববার (১৬ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার: ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা আরেফিন সিদ্দিক এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, যেকোনো সময় পাকিস্তানি বাহিনী বোমা বর্ষণ করবে এ ধরনের খবরাখবরও ছিল শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে। তারপরও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হলো সেই মুক্তাঞ্চলে। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, সেই ঘোষণাপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপিত হলো। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে ১৭ এপ্রিল শপথগ্রহণ করলেন তারা। প্রথম সরকার বলে শপথে কোনো রকমের কাট-ছাট বা সংক্ষিপ্ত করা হয়নি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তার যুক্তি তুলে ধরে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানিরা আমাদের ওপর যে আক্রমণ শুরু করল, বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরের স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, সেই ঘোষণা বঙ্গবন্ধুই দিতে পারেন। কারণ বঙ্গবন্ধু সত্তরের নির্বাচনে পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা।
‘সেই অবিসংবাদিত নেতাই পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন, সেটি বুঝা যায় ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খানের দেওয়া ভাষণে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। সেজন্য রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে তার বিচার করা হবে। এটা জানলে স্বাধীনতার ঘোষক কে তার জন্য আর অন্য কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ’
তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে গিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, তাদেরই প্রধান ব্যক্তি, পাকিস্তানের সেই সময়ের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় যে ভাষণ দিলেন, সেখানে বঙ্গবন্ধুর নাম ১৩-১৪ বার উচ্চারণ করতে হয়েছে। একজনের নামই উচ্চারণ করা হয়েছে, আর কারো নাম উচ্চারণের প্রয়োজন পড়েনি। কারণ বাঙালির নেতা একজনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি এক সূত্রে গাঁথা।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, নানা রকম উপাদান ও নানা কিছুর সংযোজন ঘটিয়ে কী দূরদৃষ্টি, দৃঢ়তা ও শক্তিময়তা নিয়ে, জনতার শক্তির বলে বাংলাদেশ আন্দোলন সার্বজনীন স্বীকৃতি অর্জন করল। পৃথিবীর বড় রাষ্ট্রগুলো সমর্থন করেনি। কিন্তু পৃথিবীর সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের সমর্থনে দাঁড়িয়ে গেল বিপুলভাবে। তার পেছনে ছিল এ আন্দোলনের বৈধতা। যে সরকার গঠিত হলো, যে আবেদন জানানো হলো বিশ্বের কাছে, সেটি গণতন্ত্রের উই দ্য পিপলেরই একটা প্রতিধ্বনি করল।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম বলেন, এক সময় জাসদের লোকেরা বলত আওয়ামী লীগের নেতারা তো কোনো যুদ্ধ করেনি, তারা দেশের বাইরে শরণার্থী থেকেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরেছে। কিন্তু আসলে তারা এটা বিবেচনা করে না, কতটা সুচিন্তিতভাবে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল। যেমন তাজউদ্দিন আহমেদ নিজে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন না, তিনি একটা জামা আর প্যান্ট পরে অফিসেই থাকতেন, অফিসেই ঘুমাতেন।
‘এই সরকার যারা পরিচালনা করেছিলেন, তারা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অগ্রসর হয়েছিলেন। তারা অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন, উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন। তারা তাদের মেধা, উচ্চ শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বঙ্গবন্ধুর নামেই স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। ’
আলোচনা সভায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাদেকুল আরেফিন, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি