ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি।
টেলিফোন আলাপে দুই নেতা কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলাপ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি টেলিফোন আলাপ করেন।
টেলিফোন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিকে ধন্যবাদ দেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও সুসংহত করতে যোগাযোগ বাড়ানোয় ইরানের নতুন প্রশাসনের প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং সেদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণকে রহমত ও শান্তিপূর্ণ রামাদানের মোবারকবাদ জানান এবং শুভ নওরোজের বিলম্বিত শুভেচ্ছা জানান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানানোয় ইরানের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের কুটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপনকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। এর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি একটি সফল কুটনৈতিক কৌশলের ক্ল্যাসিক উদাহরণ, এটি উপসাগরীয় অঞ্চল ও এর বাইরেও বৃহত্তর আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে।
ইব্রাহিম রাইসির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে তেহরান পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে অষ্টম ওআইসি সম্মেলন ও ২০১২ সালে ১৬তম ন্যাম সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে তার তেহরান সফরের কথা স্মরণ করেন।
ইরান ও বাংলাদেশের মধ্যকার ইতিহাস, বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক মিল থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দৃঢ় অভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিপুল সম্ভবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সত্যিকারের সম্ভবনার চেয়ে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ বহুগুণ কম। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে উভয় পক্ষের আরও কার্যক্রম বাড়ানোর উচিত।
এক্ষেত্রে দুই দেশের ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি যৌথ বিজনেস কমিশন (জেবিসি) গঠন ও যৌথ ইকোনোমিক কমিশনের নিয়মিত বৈঠকের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যে গুণগতমানের আমদানির জন্য বাংলাদেশ একটি উৎস হতে পারে।
তিনি বলেন, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ বিশ্বমানের পোশাক/টেক্সটাইল পণ্য, চীনামাটির বাসন, ওষুধ, হিমায়িত মাছ ও সামুদ্রিক খাবার, চামড়াজাত পণ্য, পাট/কেনাফ সুতা, আইটি, হালকা প্রকৌশল, ছোট ও মাঝারি আকারের জাহাজ, কৃষি পণ্য এবং আরও অনেক কিছু রপ্তানি করে আসছে।
বাংলাদেশ ইরানেও এসব পণ্য রফতানি করতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ও ইরানের ওআইসি এবং ডি-৮ এর সদস্য হওয়া ও বিভিন্ন সময় একে অপরকে সহায়তা করার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্ম, বিশেষ করে জাতিসংঘে ইরানকে সমর্থন দিতে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে তিনি মানবাধিকার কাউন্সিলে কানাডার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ভোট দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
এছাড়া ইরানকে বাদ দিতে জাতিসংঘের ইকোনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিলের (ইকোসোক) রেজুলেশনে ভোটদান থেকে বাংলাদেশের বিরত থাকার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
ইসলামে নারী-পুরুষের সমান আচরণের ক্ষেত্রে ইরানের নারীরা যাতে শিক্ষা এবং কাজে পুরুষের সঙ্গে সমান সুযোগসহ মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে ইরানের প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ওপর ইসরাইলের সাম্প্রতিক আগ্রাসন, আল-আকসা মসজিদ অপবিত্র করা, ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়নের নিন্দা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ইসরাইলি বাহিনীর এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে আসছে বলে ইরানের প্রেসিডেন্টকে জানান তিনি।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থ সহায়তা হ্রাস সত্ত্বেও ৫ বছরের বেশি সময় ধরে মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা।
শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইরানের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ইরানের প্রেসিডেন্ট ও ভাতৃপ্রতিম ইরানের জনগণকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগাম শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২৩, আপডেট: ০৮১৩
এমইউএম/এএটি/আরবি