ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বেদে সম্প্রদায়ের একজন বাসিন্দা রিমা বেগম (৩৮)। কদিন আগেও থাকতেন কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে পাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে।
আদি পেশা সাপ খেলা দেখানোসহ শিঙ্গা ফুঁ দেওয়ার মত পেশা পাল্টে শীঘ্রই দিবেন চায়ের দোকান। রিমার মত শিল্পী, সঙ্গীতা, পিংকী, লালনসহ ৩৫ বেদে পরিবারেই এখন পরিবর্তনে ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। সব সময় ভাসমান নৌকা অথবা ডেরাতে ঈদ কাটলেও এবারের ঈদ কাটবে সরকারের দেওয়া উপহার নিজের আধপাকা ঘরে। তাই এবারের ঈদের আনন্দটা হবে অন্যরকম।
চলতি বছরের ২২ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের গা ঘেঁষা সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুরে তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসিত করা হয়। সরেজমিনে তাদের ঘরে গিয়ে দেখা যায়, এখন আর সেই জরাজীর্ণ পরিবেশ নেই। ঘরের ভেতর রয়েছে নান্দনিক আসবাবপত্র। মাথার ওপর ঘুরছে পাখা। প্রতিটি ঘরের সামনেই দেখা মিলে আধুনিক সোলারের। এখন পর্যন্ত সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগ না পেলেও সোলার ও ব্যাটারির মাধ্যমেই তারা বিদ্যুতের চাহিদা মেটাচ্ছেন।
উপকারভোগীরা জানিয়েছেন, ঘর পেয়ে যাযাবরের মত ঘুরে ঘুরে জীবন কাটানোর পরিবেশটা বদলেছে। এখন তারা ভালো আছেন। তারা বলেন, অন্যান্য বছর জীবনে ঈদ এলেও এবারের ঈদ আনন্দটা ভিন্ন। এবার তারা নিজ ঘরে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে ঈদ পালন করবেন। ঘরেও রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। শুধু তাই নয়, তারা তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে সমাজের মূল ধারায় ফিরতে আগ্রহী। এজন্য দ্রুত সরকারি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়াসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। তাদের প্রত্যাশা মানবেতর জীবন যাপন করা অবশিষ্ট বেদে পরিবারগুলোকেও পুনর্বাসিত করে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা হবে।
রিমা বেগম বলেন, আমাদের আদি পেশার কদর কমে গেছে। আমরাও আর এই পেশায় থাকতে চাইনা। সরকার ঘর দিয়েছে, তাতে আমরা অনেক খুশি। এখন ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা শিখিয়ে ভালোভাবে মানুষ করতে চাই। তাঁবু টানিয়ে বা নৌকায় ঈদ করেছি, এবারের ঈদ পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে পাকা ঘরে করব।
বেদে মো. দুলাল মিয়া জানান, সরকারের মাধ্যমে ঘর পেয়ে আমরা ভালো আছি। তবে প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের কষ্ট হচ্ছে। জীবনে বহু কষ্ট করেছি, এখন আর কষ্ট করতে চাইনা। আমরা চাই আমাদের সন্তানেরা শিক্ষিত হয়ে স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে উঠুক। এই বেদে জীবন থেকে তারা নতুন জীবনে ফিরে আসুক।
বেদে সর্দার লালন জানান, নৌকা আর ঝোঁপঝাড়ের মধ্যেই তাদের জীবন কেটেছে। জীবনে বহু ঈদ এসেছে কিন্তু আনন্দটা ছিল ফিকে। কিন্তু এবারের ঈদে নিজের ঘরে অনেক আনন্দে ঈদ করব।
তিনি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আরও বলেন, বহু জায়গায় বেদে সম্প্রদায়ের আরও অনেক পরিবার রয়েছে। তাদেরকেও যদি আশ্রয়ণের আওতায় নিয়ে আসা হয় তাহলে তারাও সমাজের মূলধারায় ফিরতে পারত।
জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বেদে পরিবারগুলোকে নাগরিকত্ব কার্ড ও ভোটার করে তাদেরকে ঘর দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পটি তিতাস নদীর তীরে হওয়ায় তাদেরকে সদর উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মৎস্য আহরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে শীঘ্রই সরকারের পক্ষ থেকে মাছ ধরার জালসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া হবে। এছাড়াও আশ্রয়ণ কেন্দ্রিক সমবায় থেকে শুরু করে যুব উন্নয়ন, আনসার-ভিডিপির প্রশিক্ষণেও যাতে তাদের প্রশিক্ষিত করতে এগিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে কাজ চলছে। যদি ভাসমান আরও বেদে পরিবার থাকে, তাহলে তাদেরকেও আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
এসআইএ/এমজে