বগুড়া: দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব ঈদুল ফিতর। এ উৎসবকে সামনে রেখে বগুড়ার বিপণি বিতানগুলোতে ভিড় বেড়েছে ক্রেতাদের।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে বগুড়া শহরের নিউমার্কেটসহ অভিজাত বিপণিবিতানগুলো ঘুরে ক্রেতা সাধারণের ঈদের কেনাকাটার দৃশ্য দেখা যায়।
ক্রেতারা পছন্দের পোশাক কিনতে ছুটছেন একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তবে, ভিড় বেশি শহরের নিউমার্কেটে। আধুনিক শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলোতেও ভিড় বাড়ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা কারো যেন দম ফেলার ফুসরত নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, অল্প সময়ের মধ্যেই ঈদের কেনাকাটা সম্পন্ন করতে ব্যস্ত ক্রেতারা। দাম নিয়ে অতটা শক্ত মনোভাব দেখাচ্ছেন না বিক্রেতারা। অনেক ক্রেতা দামদরের চেয়ে পছন্দকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। কোনো পোশাক পছন্দ হলেই আর দেরি নয়। দাম নিয়ে কোনো পক্ষই শেষ মুহূর্তে এসে অতটা দর কষাকষি করছেন না।
ঈদকে সামনে রেখে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও এখন একদাম। এখানে দামদরের কোনো সুযোগ নেই। পছন্দ করতে পারলেই অত্যন্ত সহজে স্বল্প দামেই ক্রেতা পোশাক কিনতে পারছেন। ফুটপাতের এসব দোকানগুলোয় নিম্ন, মধ্য ও উচ্চবিত্ত পরিবারের নারী-পুরুষদের পোশাক কিনতে দেখা যায়।
শহরের রানার প্লাজা ও অভিজাত এলাকাখ্যাত জলেশ্বরীতলার বিপণিবিতানগুলোয় উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। তবে, পুরুষদের তুলনায় নারী ক্রেতার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এবার তরুণীদের ক্রেজ হলো গাররা, গাউন, সাররা ড্রেস। উঠতি বয়সী তরুণী থেকে মধ্য বয়সের নারীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে আধুনিকমানের এই পোশাকগুলোর স্থান। এই পোশাকগুলো সর্বনিম্ন সাড়ে ৩ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান দোকানিরা। বর্তমানে হাতে সময় কম থাকায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় রেডিমেড পোশাকের দোকানগুলোতে।
মার্কেটের বেশির ভাগ দোকান ও অভিজাত বিপণিবিতানে একদরে জিনিস বিক্রি করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে দাম নিয়ে তেমন একটা সমস্যা হয় না। তবে, অনেক ক্রেতাকেই পছন্দের পোশাক কিনতে বাজেট নিয়ে সমস্যায় পড়তে দেখা যায়।
নিউ মার্কেটের দোকানি রাজু প্রামাণিক, সাইদুর ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, রোজার শুরু থেকেই অনেকেই ঈদের কেনাকাটায় কমবেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঈদ সন্নিকটে আসায় বর্তমানে বিকিকিনি ভালোই হচ্ছে। ১৫ রমজানের পর থেকেই মার্কেটমুখী হতে শুরু করেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পোশাকের আমদানি ঘটিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। এবারের ঈদের কেনাকাটায় নারীদের পছন্দের শীর্ষে ছিল বিভিন্ন দেশের আকর্ষণীয় থ্রি-পিস।
বিক্রেতা সাদ্দাম হাসান, সজিব খান বাংলানিউজকে জানান, অনেকেই তৈরি পোশাক ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু ঈদ সন্নিকটে আসায় হাতে সময় নেই। এক্ষেত্রে গার্মেন্টেসের তৈরি পোশাক ছাড়া আপতত তাদের সামনে কোনো পথ নেই। এ কারণে রেডিমেড পোশাকের দোকানগুলোতে এই মুহূর্তে এসে জমে ইঠেছে বেচা-বিক্রি। এবার মেয়েদের পছন্দে বাদ যায়নি বাহারি ডিজাইনের শাড়ি। আর ছেলেদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি, জিন্স প্যান্ট ও টি-শার্ট। পাশাপাশি দেশীয় কাপড়ের কদরও রয়েছে বেশ।
ক্রেতা তাহমিনা ইয়াসমিন, মৌমিতা, জামিলুর রহমান, তাফসি খান বাংলানিউজকে জানান, রানার প্লাজা ও শহরের জলেশ্বরীতলা এলাকায় পোশাকের বিভিন্ন শো-রুমে ঘুরে ঘুরে পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা করছেন তারা। তাদের মধ্যে মেয়েরা দু’জনেই লেহেঙ্গা, গাউন ও সাররা ড্রেস কিনেছেন। এখন লেডিস ব্যাগ ও পছন্দ মতো হিল জুতো কিনবেন। এখন কাপড় কিনে পোশাক বানিয়ে নেওয়ার মতো সময় হাতে নেই। তাই ছেলেরা ইতোমধ্যেই পছন্দের রেডিমেড প্যান্ট, শার্ট ও পাঞ্জাবি কেনাকাটা করছেন।
ঈদকে সামনে রেখে শহরের নিউ মার্কেট, জলেশ্বরীতলার বিভিন্ন অভিজাত বিপণিবিতান, রেলওয়ে হকার্স মার্কেট, রেললাইন ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে এখন শুধুই ক্রেতা সাধারণের ভিড়। গার্মেন্টস, কসমেটিকস, শাড়ি, জুতার দোকানগুলোতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এ সময় এসে সবাইকে পছন্দ ও সাধ্যানুযায়ী নানা ধরনের পণ্য কিনতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, টেইলার্সগুলো থেকেও আস্তে আস্তে তৈরিকৃত কোর্ট, শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, ট্রাউজার ডেলিভারি শুরু হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
কেইউএ/এনএস