ঢাকা: দুয়ারে পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে আজ থেকেই ঢাকা ছাড়ছে রাজধানীবাসী।
অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকার রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে লক্ষ্মীবাজার, সুত্রাপুর, বাংলাবাজার, ইসলামপুর রোড, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজার, বংশাল পর্যন্ত যানজটের কারণে যাত্রীদের পায়ে হেঁটে টার্মিনালে আসতে দেখা গেছে।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে টানা ৫ বা ৬ দিনের ছুটি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী শনিবার বা রোববার (২২ বা ২৩ এপ্রিল) দেশে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। বুধবার শবে কদরের ছুটির পর বৃহস্পতিবার সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। ঈদের ছুটিতে দূরদূরান্তে প্রিয়জনদের সঙ্গে নির্বিঘ্নে যাতে ঈদ করতে যেতে পারেন সেজন্য শবে কদর ও ঈদের ছুটির মাঝখানে বৃহস্পতিবারের কর্মদিবসেও ছুটির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) পল্টন, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বিকেল থেকে ঘরমুখো মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার আগে আগে সেটা আরও বেড়ে যায়। ফলে রাজধানীর কাকরাইল মোড় থেকে যানজটের সৃষ্টি হয়, যা সদরঘাট পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও মন্থর গতিতে চলা গাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে যাত্রীদের। এর সঙ্গে তীব্র গরম। গরম আর যানজটে অতিষ্ঠ ঘরমুখো মানুষ।
গুলিস্তান থেকে রায়সাহেব বাজার হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত ছিল বাড়তি যানবাহনের চাপ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বিরক্ত হয়ে অনেক যাত্রী নির্দিষ্ট সময়ে যাতে যেতে পারেন সেজন্য বাস থেকে নেমে গরম উপেক্ষা করে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আবার অনেক যাত্রী যানজটের কারণে গাড়িতেই শুধু পানি দিয়ে ইফতার করেছেন।
রায়সাহেব বাজার থেকে বাহাদুর শাহ পার্কের আশপাশের এলাকাগুলোতে যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। যানজটের কারণে অনেক গাড়ি রায়সাহেব বাজার থেকে ঘুরে চলে আসে। আর যেগুলো যাচ্ছে সেগুলো বাহাদুরশাহ পার্কের কাছে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে হেঁটে বা রিকশায় করে সদরঘাট পৌঁছান যাত্রীরা। ফলে বাহাদুরশাহ পার্ক থেকে সদরঘাট পর্যন্ত দুপাশে যানবাহনের তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
গাজীপুর থেকে পরিবার নিয়ে সদরঘাটে যাচ্ছিলেন কবির শেখ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দুপুর ২টায় রওনা দিয়েছি। এখন সাড়ে ৬টা বাজে গুলিস্তানে আছি। আরও দেরি হলে লঞ্চ পাবো না। তাই পায়ে হেঁটে রওনা দিলাম। যে গরম, বাচ্চা নিয়ে বাসে আর বসে থাকা যাচ্ছিল না। চার পাঁচ ঘণ্টা যানজটে থেকে এখন ধৈর্যে কুলাচ্ছে না। অনেক কষ্ট হয়েছে। তবুও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবো সে আশায় বাড়ি যাচ্ছি।
মোটরসাইকেল নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন শরিয়তপুরের হেমন্ত কুমার। তাঁতীবাজার মোড়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, পল্টন থেকে মোটরসাইকেলে নিয়ে তাঁতীবাজার মোড় পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে প্রায় ২ ঘণ্টা। কী বলবো ভাই যানজটের কথা! এরকম যানজট আগে আমি দেখিনি। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে, সেজন্য নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছি। যাতে ঝামেলামুক্তভাবে বাড়ি যেতে পারি। কিন্তু যানজটে দুই ঘণ্টা শেষ!
ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের যাত্রী সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৪টায় বাসে উঠেছি। এখনও রায়সাহেব বাজারে বসে আছি। বাসেই পানি খেয়ে ইফতার করেছি। তীব্র গরম এবং সঙ্গে ভারী ব্যাগ থাকায় হেঁটে যাচ্ছি না। নইলে হেঁটেই চলে যেতাম সদরঘাটে। লঞ্চ ৮টায় ছাড়বে, পাবো কিনা জানি না।
সদরঘাটে বিআইডব্লিটিএ’র ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হেদায়েত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, কাল থেকে ছুটি শুরু হচ্ছে। আজ থেকেই ঘাটে যাত্রীর ভিড় দেখা যাচ্ছে। দিনের তুলনায় রাতে বেশি যাত্রী নিয়ে সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়বে। ঘাটে লঞ্চ বেশি থাকায় যাত্রীদের ওঠানামা করতেও বেশ অসুবিধা হচ্ছে।
এবার রমজান মাস ২৯ দিন ধরে ২২ এপ্রিল (শনিবার) ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ করে ছুটির তালিকা করেছে সরকার। ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল (শুক্র, শনি ও রোববার) ঈদের ছুটি থাকবে। ২০ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের ছুটি পাবেন। এরমধ্যে ২১ ও ২২ এপ্রিল পড়েছে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। তবে রমজান মাস ৩০ দিন হলে ঈদুল ফিতর হবে ২৩ এপ্রিল। সেক্ষেত্রে ছুটি একদিন বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ২৪ এপ্রিলও ছুটি থাকবে। ২০ এপ্রিল ছুটি হওয়ায় ১৯ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছয়দিনের ছুটি ভোগ করতে পারবেন সরকারি কর্মচারীরা। তবে ঈদের পর আগের নিয়মেই ফিরবে অফিস। আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০২৩
জিসিজি/এমজেএফ