ঢাকা: সরকারি চাকরিতে প্রতিটি সার্কুলারের বিপরীতে আবেদন করেন লাখ লাখ প্রার্থী। বিশেষ করে নিম্নতম গ্রেডগুলোতে আবেদনের সংখ্যা অনেক বেশি।
এসব সমস্যার কথা মাথায় রেখে সরকারি চাকরিতে আটটি গ্রেডে নিয়োগে সুখবর দিলো সরকার। মেধা ও কোটার বাইরে প্রতিটি পদের বিপরীতে দুইজন করে অপেক্ষমান তালিকা ও সেই তালিকা পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়া পযর্ন্ত সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন ‘মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এর অধীন সরকারি দপ্তর, পরিদপ্তর, অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবন্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের চাকরিতে ১৩-২০ গ্রেডের পদে কর্মচারী নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণ’ বিষয়ে সোমবার এক পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, আগের তৃতীয় শ্রেণি হলো গ্রেড-১৩ (যে সমস্ত পদ গেজেটেড পদমর্যাদা সম্পন্ন বলে সরকারি আদেশে সুনির্দিষ্ট উল্লেখ করে সৃষ্টি করা হয়নি) থেকে ১৬ এবং গ্রেড-১৭ থেকে গ্রেড-২০ হলো আগের চতুর্থ শ্রেণির পদ।
১৩-২০ গ্রেডের পদে কর্মচারী নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণে পদ্ধতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ে বলা হয়, নিয়োগ কমিটি (ডিপিসি) লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধা তালিকা এবং বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে শূন্য পদে প্রার্থী সুপারিশের পাশাপাশি সুপারিশকৃত প্রতিটি পদের বিপরীতে ১:২ অনুপাতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরি করে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরে সিলগালা করা খামে গোপনীয়তার সঙ্গে সংরক্ষণ করবে। অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়নের সময় ডিপিসি শূন্য পদে নিয়োগে যে জেলার জন্য প্রার্থী সুপারিশ করবে সেই জেলার যোগ্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিটি সুপারিশ করা প্রার্থীর বিপরীতে ১:২ অনুপাতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করবে। তবে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করার সময়ে কোনো কোটার অধীন কোনো জেলার যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট প্রাক্তন বৃহত্তর জেলার অন্তর্ভুক্ত জেলাসমূহের মধ্যে যে জেলার চাকরিজীবীর সংখ্যা সর্বাপেক্ষা কম, সেই জেলার যোগ্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে মেধাক্রমের ভিত্তিতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রাক্তন বৃহত্তর জেলার অন্তর্ভুক্ত কোনো জেলা থেকে উপরোক্তভাবে কোটার শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে যে জেলার চাকরিজীবীর সংখ্যা সর্বাপেক্ষা কম, সেই জেলার যোগ্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে মেধাক্রমের ভিত্তিতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণের মেয়াদ হবে বিবেচ্য বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে প্রথম নিয়োগের সুপারিশ করার তারিখ থেকে এক বছর বা শূন্য পদ পূরণের জন্য পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ; যেটি আগে ঘটে।
পরিপত্রে বলা হয়, নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত প্রার্থীদের মধ্যে কেউ চাকরিতে যোগদান না করলে বা চাকরিতে যোগদানের পর চাকরি থেকে ইস্তফা দিলে শূন্য পদ পূরণের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ডিপিসির সভায় অপেক্ষমাণ তালিকা এবং উত্তীর্ণ প্রার্থীদের রেজাল্ট সিট উপস্থাপন করে শূন্য পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থী সুপারিশ করতে হবে। পাশাপাশি কমিটির উপস্থিতিতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে সুপারিশকৃত প্রার্থীকে তার নিয়োগের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ডিপিসি কর্তৃক অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে সুপারিশ করা প্রার্থীদের রোল নম্বরের তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নোটিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং সদস্য সচিব কর্তৃক প্রার্থীকে মোবাইল ফোনের মেসেজের মাধ্যমে অবহিত করতে হবে।
পরিপত্রে বলা হয়, অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের জ্যেষ্ঠতা প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীদের পরে নির্ধারিত হবে। ডিপিসি অপেক্ষমাণ তালিকার কোনো প্রার্থীকে চাকরিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করলে তার জ্যেষ্ঠতা তার ওই পদে যোগদানের তারিখ থেকে নির্ধারিত হবে। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে দুই বা ততোধিক প্রার্থী যদি একই দিনে একই পদে যোগদান করেন সেক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা পূর্বে প্রস্তুতকৃত রেজাল্টের মেধাক্রম অনুসারে নির্ধারিত হবে। তবে একই নম্বর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বয়সের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে এবং বয়স একই হলে নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের শিক্ষাবর্ষের ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে।
সেখানে আরও বলা হয়ছে, যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রস্তুত করা হবে, ডিপিসি কর্তৃক সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বাইরে অন্য কোনো বিজ্ঞাপনের শূন্য পদ বা অন্য কোনোভাবে পদ শূন্য হলে উক্ত শূন্য পদ পূরণের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকার কোনো প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা যাবে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মাদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত পরিপত্রে উপর্যুক্ত সরকারি সিদ্ধান্ত সব মন্ত্রণালায় বিভাগ ও এর অধীন সরকারি দপ্তর, পরিদপ্তর, অধিদপ্তর/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের সব পর্যায়ের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে অবগত করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবকে তার আওতাধীন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, সংস্থা, দপ্তর, প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৩
এমআইএইচ/এসএ