ঢাকা: ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার আগে মূল্যবান স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে রেখে যেতে নগরবাসীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরে ফেরা মানুষের ঈদযাত্রা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ অনুরোধ জানান।
আইজিপি বলেন, ঈদে ফাঁকা ঢাকায় অপরাধীরা অপরাধ সংগঠনের চেষ্টা করে। অনেক সময় নাগরিকরা তাদের মূল্যবান স্বর্ণালংকার ও টাকা-পয়সা ঘরে রেখে দরজায় তালা দিয়ে চলে যান। এই সুযোগে অপরাধীরা খবর পেয়ে অপরাধ করার চেষ্টা করে থাকে। এ জন্য মূল্যবান সামগ্রী আস্থাভাজন আত্মীয়-স্বজনের কাছে রেখে যাবেন।
একইসঙ্গে কলকারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় করে যাওয়ারও অনুরোধ জানান তিনি।
যাত্রীদের মূল্যবান সামগ্রী আত্মীয়ের বাসায় রেখে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। নিরাপত্তার জন্য কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, ডিএমপিতে আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেটুকু আমাদের আওতায় মধ্যে যেমন মার্কেটের নিরাপত্তা, চাঁদ রাত পর্যন্ত ইফতার ও সেহেরির সময় নিরাপত্তার ব্যবস্থা, ঈদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ সারা ঢাকা শহরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা রেখেছি। আমাদের ৯৯৯ চালু থাকবে। যেকোনো সমস্যা হলে কল দিলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের টিম পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া টাকা পয়সা পরিবহনে যদি আমাদের সহায়তা চান, তাহলে আমাদের টিম রয়েছে। সেখান থেকে আপনারা নিয়ে যেতে পারেন।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে নৌ টার্মিনাল ভিজিট করেছি। লঞ্চের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, এখনো ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় বা চাপ পুরোমাত্রায় শুরু হয়নি। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে নৌপথে চাপ একটু কমেছে। তারপরও এই চাপ আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নৌ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাত্রাপথেও নৌ পুলিশ মোতায়েন থাকবে। একইসঙ্গে ঈদের আগে ও পরে মোট ১১ দিন বাল্কহেডগুলো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন স্থানে ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবেন। আশা করছি, সম্মানিত যাত্রীরা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবেন। এ ছাড়া যাত্রীদের যাত্রা সুখকর করার পাশাপাশি নিরাপদ করার জন্য নৌ পুলিশ আপনাদের পাশে রয়েছে।
আইজিপি বলেন, সারা দেশে নিরাপত্তার জন্য হাইওয়ে, রেলওয়ে নিরাপত্তার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সবাই মিলে একযোগে দায়িত্ব পালন করছি। দায়িত্ব পালনে ঢাকা মহানগরের সব ফোর্সের প্রতিনিধিরা আছেন।
তিনি বলেন, ঈদে আমাদের নাগরিকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে যাবেন। বিশেষ করে বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পষ্টেও আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন থাকবে। আমরা সব নাগরিক ও যাত্রীদের অনুরোধ করব রাস্তায় অপরিচিত কারো কাছ থেকে কোনো কিছু খাবেন না। নিজের সতর্কতা নিজে অবলম্বন করবেন। আমরা আপনাদের পাশে আছি। কোনো ধরনের সমস্যা হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
তিনি আরও বলেন, এ বছর পদ্মা সেতু হওয়ায় অনেক যাত্রী পদ্মা সেতু দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাবেন। রাস্তাগুলো প্রশস্ত হয়েছে। ফলে আগে সড়কে যে দুর্ভোগ ছিল সেটা এখন আর হবে না। একইসঙ্গে ছুটি একদিন বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষ ধীরে বাড়ি যেতে সময় পাবেন বলে আশা করছি।
গুলিস্তান থেকে সদরঘাট আসতে যানজটের জন্য দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়। সে বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বর্তমানে যানজট অনেক কম। ৭০০ পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করেছি, যাতে যাত্রীরা নির্বিঘ্নে এখানে আসতে পারেন। এ বছর ঈদের ছুটি বেড়েছে। আমরা আশা করছি যাত্রীরা নির্বিঘ্নে সদরঘাট টার্মিনালে আসতে পারবেন। পাশাপাশি ফেরত আসার পরও নির্বিঘ্নে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে যেতে পারবেন।
এবার ঈদ জামাতকে ঘিরে কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা করছেন কি না- জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা অ্যাক্টিভ আছে। এ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো তথ্য আমরা পাইনি। এজন্য আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৩
জিসিজি/আরএইচ