ঢাকা: প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ছে নগরবাসী। দীর্ঘ ছুটির আমেজ নিয়ে তীব্র গরম ও যানজট উপেক্ষা করে বুধবার (১৯ এপ্রিল) সকাল থেকেই যাত্রীরা জড়ো হন ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে।
বিকেল ৩টা পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। তবে আজ যাত্রীদের ভিড় না থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক যাত্রী লঞ্চ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই এসে বসে আছেন। সকালের দিকে তেমন ভিড় ছিল না। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে টার্মিনালে।
বিকেল ৩টার মধ্যেই বেশির ভাগ লঞ্চের কেবিন বুক হয়ে যায়। কারণ কেবিনগুলো অনলাইনেই বুক করা হয়ে থাকে। তবে অনেক লঞ্চের ডেক ছিল ফাঁকা। নতুন করে পন্টুন স্থাপন করায় আয়তন ও প্রস্থ বেড়েছে টার্মিনালের।
ফলে যাত্রীরা সহজেই লঞ্চে উঠতে পারছেন। পন্টুনগুলোতে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি। দূরপাল্লার লঞ্চগুলো বিকেল ৩টা থেকেই যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে সদরঘাট ছেড়ে যেতে শুরু করে। নির্ধারিত সময়েই লঞ্চ ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।
আমতলীগামী সুন্দরবন লঞ্চের যাত্রী মো. জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, পরিবার নিয়ে ঈদ করব। তাই সকালেই গাজীপুর থেকে রওনা হই। বিকেল ৪টায় লঞ্চ ছাড়বে। ভিড় এড়াতে একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। এসে দেখি যাত্রী নেই। এবার ছুটি বেশি পাওয়ায় সবাই ধীরে বাড়ি যাচ্ছে। ফলে টার্মিনালে ভিড় ও ভোগান্তি কোনোটিই নেই।
বরগুনার এম ভি পূরবী লঞ্চের যাত্রী বিপ্লব বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, পুরান ঢাকায় একটি বাইন্ডিং কারখানায় কাজ করি। আজ থেকে ছুটি। তাই ভিড় ও ঝামেলা এড়াতে আগেই লঞ্চে চলে এসেছি। কষ্ট শুধু গরম। তবে লঞ্চ ছাড়লে তাও কমে যাবে। এখন কোনো ভিড় নেই। লঞ্চ ভরে গেছে। একটু পরই ছেড়ে দেবে।
ঢাকা-হুলারহাট-ভাণ্ডারিয়া রুটের পারাবত-৮ নামের লঞ্চের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মানুষ টিকিট কেনার সময় জাতীয় পরিচয় নম্বর চাওয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও অনেকের কাছে চাওয়া হচ্ছে না।
লঞ্চের সুপারভাইজার আব্দুল জলিল মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, সবার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষই আনছে না। ফলে মোবাইল নম্বর নিয়ে টিকিট দেওয়া হচ্ছে। কোনো রকমের ভোগান্তি নেই। যাত্রীদের চাপও কম। আশা করছি আগামীকাল থেকে চাপ একটু বাড়বে।
এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমরা ইতোমধ্যে নৌ টার্মিনাল ভিজিট করেছি। লঞ্চের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি। এখনো ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় বা চাপ পুরোমাত্রায় শুরু হয়নি। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে নৌপথে চাপ একটু কমেছে। তারপরও এই চাপটা আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত নৌ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাত্রাপথেও নৌ পুলিশ মোতায়েন থাকবে। একইসঙ্গে ঈদের আগে ও পরে মোট ১১ দিন ব্লাকহেডগুলো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবেন। আশা করছি যাত্রীরা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবেন। এ ছাড়া যাত্রীদের যাত্রা সুখকর করার পাশাপাশি নিরাপদ করার জন্য নৌ-পুলিশ আপনাদের পাশে রয়েছে।
নৌ-পুলিশ প্রধান মো. সফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীরা ইতোমধ্যেই বাড়ি যেতে শুরু করেছেন। এই মুহূর্তে লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ দেখা না গেলেও সন্ধ্যায় তা বাড়বে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, র্যাব, আনসার, নৌ-পুলিশ ও বিএনসিসিসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এবার ঈদের আগে বেশ কয়েকদিন ছুটি থাকায় যাত্রীরা ধীরে ধীরে ঢাকা ছাড়ছেন। আশা করছি, নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন যাত্রীরা।
তিনি বলেন, আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে লঞ্চ ছাড়ছি। লঞ্চে লাইফ বয়া, ফায়ার বাকেট, দক্ষ চালক এবং অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছে কি না, সে সব বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। লঞ্চের লোড লাইনের অতিরিক্ত যাত্রী নিতে দেওয়া হচ্ছে না। ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের নজরে এমন কিছু এখন পর্যন্ত আসেনি। আশা করছি যাত্রীরা নিরাপদে বাড়ি যেতে পারবেন।
সদরঘাট নৌ থানা কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক বাংলানিউজকে বলেন, যাত্রীসেবায় আমরা সর্বদা সজাগ রয়েছি। এখনো পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। যাত্রীদেরও কোনো চাপ নেই। তবে আজ সন্ধ্যা থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়বে।
আগামীকাল গার্মেন্টস ছুটি হলে চাপ আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
লঞ্চ টার্মিনালে ট্রাফিক ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ অফিস থেকে জানা গেছে, বিকেল ৩টা পর্যন্ত দেশে ৪৫টি নৌরুটে ঢাকা থেকে লঞ্চ ছেড়ে গেছে ৪৯টি, ঢাকায় এসেছে ৫৫টি। রাতে সব মিলিয়ে ১০০টির মতো লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে যাবে। গতকাল পর্যন্ত ৮০ থেকে ৮৬টি লঞ্চ বিভিন্ন রুটে চলত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৩
জিসিজি/আরএইচ