লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাটে পরিত্যক্ত হিমাগারের ভেতর থেকে মাহিনুর আক্তার পারুল নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধারের আড়াই মাস পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেন ও তার সহযোগী জাহাঙ্গীর সর্দার নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ধর্ষণ করতে না পেরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মাহিনুরকে হত্যা করেন দেলোয়ার। হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন দেলোয়ার।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজ্জামান আশরাফ প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান।
তিনি জানান, সোমবার (১৭ এপ্রিল) দেলোয়ারকে গাজীপুর জেলার মৌচাক এলাকা থেকে ও জাহাঙ্গীরকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদেরকে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার দেলোয়ার সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের মধ্য চররমনী মোহন গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আবু তাহেরের ছেলে ও জাহাঙ্গীর একই ইউনিয়নের চররমনী মোহন গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মজিবুল সর্দারের ছেলে। দেলোয়ার পেশায় সিএনজি অটোরিকশাচালক।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ জানান, ভিকটিম মাহিনুর আক্তার পারুল সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের টুমচর গ্রামের নুর নবীর মেয়ে। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা ছিলেন। তার ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মাহিনুর লক্ষ্মীপুর বিসিক শিল্পনগরীর একটি চকলেট কারখানার শ্রমিক ছিলেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি বকেয়া বেতনের জন্য তিনি কারখানাতে যান। এরপর তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। দুদিন পর ৮ ফেব্রুয়ারি চররমনী ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট এলাকার পরিত্যক্ত কোল্ডস্টোরেজ থেকে অজ্ঞাত হিসেবে মাহিনুরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ছবি ছড়িয়ে দিলেই একইদিন পরিচয় শনাক্ত হয়।
একইদিন রাতে নিহতের বড় ভাই মো. তামিম বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তবে হত্যার ঘটনাটি পুরোই ক্লু-লেস ছিল। সেটি তদন্তকালে পুলিশ স্থানীয় মাদকসেবীসহ বিভিন্নজনকে নজরে রাখে। সেখানে একটি সিসি ক্যামেরা ছিল সেখান থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরে প্রযুক্তির মাধ্যমে ল্যাক এবং সেল বের করে ঘটনাস্থলে কারা কারা আসে তা শনাক্ত করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ৪০-৫০ জনের নাম পাওয়া যায়। এরমধ্যে সিএনজি চালক দেলোয়ারের নামও ছিল। কিন্তু ঘটনার দিন ও তার ল্যাক সেল আইডির দিন থেকে গ্রেপ্তারের আগমুহূর্ত পর্যন্ত এ এলাকায় উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়নি। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরসহ আরও কয়েকজনকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
এলাকাতে না থাকায় সিএনজি অটোরিকশাচালক দেলোয়ারকে সন্দেহ করা হয়। পরে সোমবার দেলোয়ারকে গাজীপুরের মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি হত্যার ঘটনা স্বীকার করে।
দেলোয়ারের জবানবন্দির বরাত দিয়ে এসপি জানিয়েছেন, মাহিনুর মজুচৌধুরীর হাট সড়কের কাচারিবাগ এলাকার একটি গ্যাস পাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে দেলোয়ার তার সিএনজিতে মাহিনুরকে যাত্রী হিসেবে উঠায়। এসময় মাহিনুর সিএনজি চালক দেলোয়ারের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কথাবার্তা আলোচনা করেন। এতে তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠে। তারা দুইজনেই মজুচৌধুরীরহাটের একটি রেস্তোরাঁয় খাবার খান। এ সময় দেলোয়ার তার বন্ধু জাহাঙ্গীরকেও ওই হোটেলে আসতে বলেন। সেখানে জাহাঙ্গীরের কাছে মাহিনুরকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় দেলোয়ার। পরে তারা তিনজন ঘুরতে বের হয়। এই ফাঁকে দেলোয়ারের সাথে মাহিনুরের আরও কথাবার্তা হলে তাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য মাহিনুরকে ২ হাজার টাকা দেয় দেলোয়ার।
মাহিনুরকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দেলোয়ার তাকে রাতে জাহাঙ্গীরের বাসায় যাবার প্রস্তাব দেয়। তারা লক্ষ্মীপুরের দিকে ঘোরাঘুরি করে রাত প্রায় সাড়ে ৭ টার দিকে পুনরায় মজুচৌধুরীর হাট সংলগ্ন পরিত্যক্ত হিমাগারের পাশে যায়।
দেলোয়ার মাহিনুরকে জাহাঙ্গীরের বাড়িতে নিয়ে যাবার কথা বলে হিমাগারের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয় দেলোয়ার। মাহিনুর রাজি না হওয়ায় জাহাঙ্গীর ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
পরে দেলোয়ার মাহিনুরের গায়ে হাত দিলে তিনি চিৎকার চেচামেচি করতে থাকেন। এতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মাহিনুরকে শ্বাসরোধে হত্যা করে দেলোয়ার। পরে মরদেহ ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে পালিয়ে যান তিনি। পরদিন দেলোয়ার ঘটনাটি জাহাঙ্গীরকে জানালে তিনি তাকে পালিয়ে যাবার পরামর্শ দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৩
এসএএইচ