ঢাকা: বিশ্বের ৬৮টি দেশের ২৪ শতাংশ নারী তাদের স্বামী/সঙ্গীকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে না বলতে পারে না। আর ১১ শতাংশ নারী গর্ভনিরোধক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক তথ্য উপাত্ত মতে, জনসংখ্যার উদ্বেগ ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হচ্ছে এবং বিভিন্ন দেশের সরকার উর্বরতার হার বাড়ানো, কমানো বা বজায় রাখার লক্ষ্যে ক্রমবর্ধমান নীতি গ্রহণ করছে। কিন্তু উর্বরতার হারকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা প্রায়শই অকার্যকর হয় এবং তা নারীর অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে ইউএনএফপিএ’র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
জনমিতিক সংখ্যা কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে সেই পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া নিয়ে পুনর্বিবেচনার পাশাপাশি জনসংখ্যা বিস্ফোরণ নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমকে অতিরঞ্জন পরিত্যাগ করতে ল্যান্ডমার্ক রিপোর্ট ‘এইট বিলিয়ন লাইভস, ইনফিনিট পসিবিলিটিস: দ্য কেস ফর রাইটস অ্যান্ড চয়েসেস’ আহ্বান জানিয়েছে। জনগণ কত দ্রুত প্রজনন করছে, তা জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে, নেতাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত যে, ব্যক্তি বিশেষ করে নারীরা স্বাধীনভাবে তাদের নিজস্ব প্রজনন পছন্দ করতে সক্ষম কিনা—যদিও এই প্রশ্নের উত্তর প্রায়ই ‘না’ হয়।
ইউএনএফপিএ’র নির্বাহী পরিচালক ড. নাতালিয়া কানেম বলেছেন, পরিবর্তনশীল জনসংখ্যার লক্ষ্যবিন্দুতে নারীদের প্রজনন নিয়ন্ত্রণে আবদ্ধ থাকা উচিত নয়। জনসংখ্যার আকার নির্বিশেষে একটি সমৃদ্ধশালী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়তে, জনসংখ্যার পরিবর্তনের জন্য আমরা কীভাবে কথা বলি এবং পরিকল্পনা করি, তা আমাদের আমূলভাবে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
প্রতিবেদনে উল্লিখিত ৬৮টি দেশে দেখা যাচ্ছে যে, প্রায় ৪৪ শতাংশ নারীর যৌন মিলন, গর্ভনিরোধক ব্যবহার এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ সম্পর্কে অবগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই; এবং বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ২৫৭ মিলিয়ন নারীর নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য গর্ভনিরোধের একটি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
অতীত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, জন্মহার বৃদ্ধি বা কমার জন্য যেসব উর্বরতা নীতি পরিকল্পনা করা হয়, তা প্রায়শই অকার্যকর এবং নারীর অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে। অনেক দেশে পরিবারকে বড় করার নারী এবং তাদের স্বামী/সঙ্গীদের আর্থিক প্রণোদনা, পুরষ্কার প্রদানের প্রোগ্রাম চালু করলেও সেখানে নারী প্রতি দুই সন্তানের কম জন্মহার দেখা যাচ্ছে। আবার, জোরপূর্বক নির্বীজন এবং গর্ভনিরোধের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ধীর করার প্রচেষ্টাতেও মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
পরিবার পরিকল্পনাকে অবশ্যই উর্বরতার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা উচিত নয়; বরং এটি ব্যক্তিদের ক্ষমতায়নের জন্য একটি হাতিয়ার। জোর-জবরদস্তি ব্যতিরেকে কখন এবং কতটি সন্তান গ্রহণ করতে চায়, তা বেছে নিতে নারীদের সক্ষম হওয়া উচিত।
সরকার যেন জেন্ডার সমতা ও সমধিকারকে কেন্দ্রে রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করে, সে বিষয়ে প্রতিবেদনটিতে দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করা হয়ছে। উদাহরণস্বরূপ, পিতৃ ও মাতৃকালীন ছুটির কার্যক্রম, চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট, কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার সমতা ত্বরান্বিত করে এমন নীতি এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকারগুলিতে সর্বজনীন অ্যাক্সেস। এগুলি সমন্বিতভাবে অর্থনৈতিক লভ্যাংশ কাটাবে এবং জনসংখ্যার পরিবর্তন যেমনই হোক না কেন স্থিতিশীল সমাজ বিনির্মাণে সক্ষমতার দিকে পরিচালিত করবে।
২০২৩ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও উপাত্ত হলো:
১. প্রতিবেদনে প্রাপ্ত ৬৮টি দেশের তথ্য মোতাবেক, ২৪ শতাংশ নারী ও মেয়ে তাদের স্বামী/সঙ্গীকে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে না বলতে পারে না এবং ১১ শতাংশ নারী গর্ভনিরোধক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম।
২. ৮টি দেশে পরিচালিত জরিপে দেখা যায় যে, মিডিয়া বা বিভিন্ন আলোচনায় বৈশ্বিক জনসংখ্যা আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই বিশ্বে জনসংখ্যার আধিক্য হয়েছে বলে মনে করেন।
৩. বৈশ্বিক জনসংখ্যার দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে: দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কম উর্বরতার প্রেক্ষাপটে বসবাস করছে, যেখানে ০৮টি দেশ (কঙ্গো, মিশর, ইথিওপিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন এবং তানজানিয়া) ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব জনসংখ্যার অর্ধেক প্রত্যাশিত বৃদ্ধির জন্য দায়ী থাকবে। এসব দেশসমূহের কারণে বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশগুলির দেশগুলির র্যাঙ্কিংও নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে।
৪. জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উর্বরতাকে দায়ী করা সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারীকে দায়বদ্ধ করবে না। ৮০০ কোটি মানুষের মধ্যে, প্রায় ৫৫০ কোটি মানুষ দৈনিক প্রায় ০১ ডলার পর্যন্তও যায় করে না এবং কার্বন নিঃসরণে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখে না।
৫. জাতিসংঘ পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা মতে, শ্রমশক্তিতে বৃহদাকারে জেন্ডার সমতা নিশ্চিত হলে তা নারীদের জন্য অধিক সন্তান ধারণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের চেয়ে বার্ধক্য ও নিম্ন জন্মহারপ্রবণ সমাজে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে আরও বেশি কাজ করবে।
উল্লেখ্য, স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্ট হলো ইউএনএফপিএ’র বার্ষিক ফ্ল্যাগশিপ প্রকাশনা। ১৯৭৮ সাল থেকে এটি প্রতিবছরই প্রকাশিত হয়ে আসছে, যা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকারের ক্ষেত্রে উদীয়মান বিষয়গুলির ওপর আলোকপাত করে, এগুলোকে মূলধারায় নিয়ে আসে এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নের জন্য তারা যেসকল চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলি উপস্থাপন করে তা অন্বেষণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৩
টিআর/এমজেএফ