ঢাকা: দুই দিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ কাটাতে ইত্যোমধ্যে রাজধানী ছাড়ছেন নগরবাসী।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, আপনজনদের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। বিকেল থেকেই যাত্রীদের পদচারণা আর লঞ্চ স্টাফদের হাঁক ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে লঞ্চ টার্মিনাল। এদিন স্বাভাবিকের চেয়ে পল্টুনে যাত্রীদের ভিড় বাড়লেও ঈদ উপলক্ষে যে পরিমাণ যাত্রী থাকার কথা তা হয়নি। ফলে যাত্রীরা ভাবার সময় পাচ্ছেন কোন লঞ্চে যাবেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে যাত্রীদের চাপ গত বছর থেকে কম থাকায়। স্বাভাবিক দিনের থেকে লঞ্চগুলোতে বেশি যাত্রী নিয়েই ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতিটি লঞ্চ ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী নিচ্ছে। পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছে।
গ্লোরী অব শ্রীনগরের কেবিন স্টাফ মো. মিলন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ভোলার লালমোহনের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাবে। ২৪০০ থেকে ৩০০০ ধারণ ক্ষমতা হলেও ১৭০০ থেকে ১৮০০ লোক নিয়ে যাচ্ছি। যাত্রীদের চাপ এখনও পুরোপুরি পড়েনি। আগামীকাল থেকে পুরো চাপ পড়বে। আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া থেকে কম নিচ্ছি। সরকার ৫৮০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে, আমরা সেখানে ৫০০ টাকা নিচ্ছি। এবার কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই লঞ্চে ঈদযাত্রা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
ঢাকা থেকে বেতুয়া-চরফ্যাশন-দৌলতখান-হাকিমুদ্দিন মঙ্গলশিকদার যাবে এম ভি টিপু -১৩। এই লঞ্চের সুপারভাইজার মো. রতন কবির বাংলানিউজকে বলেন, সাড়ে ৭টায় লঞ্চ ছেড়ে যাবে। কিন্তু লঞ্চের অনেক কেবিন এখনও ফাঁকা আছে। ডেকেও আরো কিছু লোক নেওয়া যাবে। যাত্রী কই। মনে হচ্ছে ফাঁকা লঞ্চ নিয়েই যাত্রা শুরু করতে হবে।
এম ভি তাসরিফ-৪ এর লস্করম্যান মো: আব্দুর রাজ্জাক জানান, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত যাত্রীদের কোন চাপ ছিলো না। সন্ধ্যার পর থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। আগামীকাল আরো বাড়বে। ছুটি বেশি হওয়াতে মানুষ আস্তে ধীরে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। যাত্রীদের চাপ থাকলে পল্টুন এমন ফাঁকা থাকতো না। যাত্রীদের চাপ থাকলে পল্টুনে হাঁটা যেতো না। আজকে কম থাকলেও কাল থেকে যাত্রীর সংখ্যা আরো বাড়বে।
পরিবার নিয়ে দুলিয়াঘাট যাবেন মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভালোভাবে আসতে পেরেছি। লঞ্চেও চাপ কম। মনে হচ্ছে আরামেই যেতে পারবো।
ভোলা যাবেন মো. মনির হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এবারের মতো এতো সুন্দর ঈদযাত্রা আমি কখনো করিনি। সড়কে কোনো যানজট ছিলো না। লঞ্চেও তেমন ভিড় নেই। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ভিড় বেশি। তারপরও এই গরমের মধ্যে শান্তিতে যেতে পারবো সেটা ভেবেই ভালো লাগছে।
আয়শাবাড়ী-বেতুয়া-চরফ্যাশন যাবে এম ভি তাসরিফ-৪। সেই লঞ্চের যাত্রী শান্ত দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর ভিড় অনেক কম। কারণ এখন বরিশাল লাইনের অর্ধকের বেশি মানুষ পদ্মা সেতু হয়ে চলে যায়। ফলে সদরঘাটে তাদের আর আসতে হয় না। এজন্য বরিশাল লাইনের থেকে ভোলা লাইনে চাপ বেশি।
এর আগে সকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমরা ইত্যোমধ্যে নৌ টার্মিনাল ভিজিট করেছি। লঞ্চের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, এখনও ঘরেফেরা মানুষের ভিড় বা চাপ পুরোমাত্রায় শুরু হয়নি। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে নৌপথে চাপ একটু কমেছে। তারপরও এই চাপটা আরো বাড়বে।
তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নৌ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাত্রাপথেও নৌপুলিশ মোতায়েন থাকবে। একই সাথে ঈদের আগে ও পরে মোট ১১ দিন ব্লাকহেডগুলো চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবেন। আশা করছি সম্মানিত যাত্রীরা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারবেন। এছাড়া যাত্রীদের যাত্রা সুখকর করার পাশাপাশি নিরাপদ করার জন্য নৌপুলিশ আপনাদের পাশে রয়েছে।
বাংলাদেশ নৌ-পুলিশ প্রধান মো. সফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীরা ইতিমধ্যেই বাড়ি যেতে শুরু করেছেন। ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, র্যাব, আনসার, নৌ-পুলিশ ও বিএনসিসিসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এবার ঈদের আগে বেশ কয়েকদিন ছুটি থাকায় যাত্রীরা ধীরে ধীরে ঢাকা ছাড়ছে। আশা করছি, নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন যাত্রীরা।
লঞ্চ টার্মিনালে ট্রাফিক ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের অফিস থেকে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত দেশে ৪৫টি নৌরুটে ঢাকা থেকে লঞ্চ ছেড়ে গেছে ৭৬টি, ঢাকাতে এসেছে ৮০টি। আজ রাতের সব মিলিয়ে ১০০টির মতো লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে যাবে। গতকাল পর্যন্ত ৮০ থেকে ৮৬টি লঞ্চ বিভিন্ন রুটে চলাচল করতো।
>>> আরও পড়ুন: ঈদযাত্রার প্রথম দিন ছিল স্বস্তিদায়ক: জাতীয় কমিটি
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২৩
জিসিজি