ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শেষ হচ্ছে রাখাইনদের সাংগ্রেংপোয়ে উৎসব

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৩
শেষ হচ্ছে রাখাইনদের সাংগ্রেংপোয়ে উৎসব

কক্সবাজার: মঞ্চে চলছে গান। মঞ্চের সামনে শিশু কিশোর,তরুণ তরুণীসহ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার বাঁধভাঙ্গা উচ্ছাস।

সে এক অন্য রকম আনন্দ। মাঠের একপাশে তৈরি করা জলকেলির প্যান্ডেলেও চলছে একে অপরকে জল ছিটানোর আনন্দ। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও উৎসবস্থল মুখী মানুষের স্রোত তখনও থামেনি।

বলছিলাম কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী দক্ষিণ রাখাইন পাড়ার সাংগ্রংপোয়ে বা জলকেলি উৎসবের কথা।

১৩৮৪ রাখাইন বর্ষ বা মগী সনকে বিদায় আর ১৩৮৫ রাখাইন বর্ষ বা নববর্ষকে বরণে প্রতিবছরের মতো সাংগ্রেংপোয়ে উৎসব যেন আনন্দের সর্বোচ্চ সীমারেখাও ছাড়িয়ে গেছে। এ বছরও এ উৎসবের আয়োজন করে দক্ষিণ রাখাইনপাড়া যুব সমাজ।

শুধু চৌফলদন্ডী নয় এ বছর জেলার কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, মহেশখালী, রামু, টেকনাফ উপজেলার অন্তত ৫০ এলাকায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। গত সোমবার (১৭ এপ্রিল) শুরু হওয়া চারদিনের উৎসব শেষ হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল)।

রাখাইন যুবক কেংগ্রী রাখাইন জানান, রাখাইন নববর্ষকে বিদায় ও বরণে আগে কক্সবাজারে  তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজন করা হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চৌফলদন্ডীর দক্ষিণ রাখাইন পাড়ায় এ উৎসব আয়োজন হওয়ায় ব্যাপ্তি বেড়ে এখন চারদিন হয়েছে। তাই জেলার অন্যান্যস্থানে সাংগ্রেপোয়ে সমাপ্তি হলেও চৌফলদন্ডীতে শেষ হচ্ছে আজ। যে কারণে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে উৎসবে যোগ দিয়েছে লোকজন। তাইতো হাজারো প্রাণের স্পন্দনে মুখরিত হয়ে ওঠেছে এ অনুষ্ঠান।  

শুধু শিশু-কিশোর বা তরুণ-তরুণীরা নন, বয়সী লোকজনও সমান তা আনন্দে উদ্ভাসিত। সমবয়সীরা দল বেঁধে বেঁধে নেচে গেয়ে মেতেছে এক অন্য রকম আনন্দে। নাচ গানের পাশাপাশি একে অপরকে ছুঁড়ে মারছে মঙ্গলজল। সবার বিশ্বাস,মঙ্গল জলে ধুয়ে মুছে যাবে পুরনো বছরের সব গ্লানি।  

‘এটি আমাদের ধর্মীয় কোনো উৎসব নয়। সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। সারা বছর চেয়ে থাকি কখন এ উৎসব আসবে। একসঙ্গে মিলিত হবো। এভাবে বললেন স্কুল ছাত্রী মেমেছেন রাখাইন।

আয়োজকদের মধ্যে মংছেনহেন, থোয়েব, ক্যাছিং ছেন বাংলানিউজকে জানান, কক্সবাজার শহরে এ উৎসব আয়োজনে সরকারি-বেসরকারি না সহযোগিতা পেলেও এখানে গ্রামের যুব সমাজ প্রতি ঘর থেকে অর্থ সংগ্রহ করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।  এ উৎসবে এসে লোকজন অন্য রকম আনন্দে মেতে ওঠে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের পূর্ব-পশ্চিম মাছ বাজার, ফুলবাগ সড়ক, ক্যাংপাড়া, হাঙরপাড়া, টেকপাড়া, বার্মিজ স্কুল রোড, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক ও চাউল বাজারসহ অন্তত ১০টি প্যান্ডেলে এ উৎসব চলে। এছাড়াও জেলার মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, রামু, চৌফলদন্ডীসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত অর্ধশত প্যান্ডেলে এ  উৎসবের আয়োজন করা হয়। যেখানে রাখাইনদের পাশাপাশি অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও উৎসবে শামিল হয়েছে।

কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মংছেনহ্লা রাখাইন বলেন, পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৬ এপ্রিল রাত ১২টা ১৩৮৪ রাখাইন অব্দ (মগীসন) শেষ হয়েছে। ১৩৮৫ অব্দ শুরু হয়েছে ১৭ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে। যুগযুগ ধরে রাখাইন নববর্ষকে বিদায় ও বরণ করতে সাংগ্রেপোয়ে বা জলকেলি উৎসবের আয়োজন করে আসছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২৩
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।