পাথরঘাটা, (বরগুনা): ‘ওরে বাবা...। বুকটা আইজ খালি খালি লাগেরে...।
ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজে যাওয়ার সময় এমন আর্তনাদ করেছিলেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রহিম ও আমিন বেপারি নামের দুই ভাই।
৬ জানুয়ারি বলেশ্বর নদে মাছ ধরার সময় ট্রলার ডুবে প্রাণ হারায় আব্দুর রহিমের ছেলে ইউসুফ বেপারি (২৩) ও আমিন বেপারির ছেলে বাইজিদ বেপারি (১৭)।
নিখোঁজ হওয়ার ছয় দিন পর ১১ জানুয়ারি ছোট ভাইয়ের জানাজার সালাম ফেরানোর পরই মিলল বড় ভাইয়ের মরদেহ। বলেশ্বর নদে নৌকাডুবির ঘটনার ছয় দিন পর মেলে ছোট ভাই বাইজিদের মরদেহ। তার জানাজার সালাম ফেরানোর পরই খবর আসে জানাজাস্থলের কাছাকাছি বড় ভাই ইউসুফেরও মরদেহ পাওয়া গেছে। একসঙ্গে নিখোঁজ হয়ে নৌকা ডুবে তাদের মৃত্যু হয়। এর ছয় দিন পর ছোট ভাইয়ের মরদেহ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মেলে বড় ভাইয়ের মরদেহ। ওই সময় পর পর দুই ভাইয়ের মরদেহ পাওয়ার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
ঈদের দিন সকালে পদ্মা গ্রামে দুই ভাইয়ের গিয়ে দেখা যায় আর্তনাদ। এ প্রতিবেদককে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আপন দুই ভাই আব্দুর রহিম ও আমিন বেপারি।
তারা বলেন, মোগো কপালে ঈদ আছে ভাই। পোলা দুইঢারে নিজের হাতে কবর দিছি। বাড়ির সামনে দরজায় দুই বাইরে একসঙ্গে দাফন দিমা কেমনে ঈদের নাস্তা খামু।
আব্দুর রহিম বেপারি বলেন, মোর পোলাডা মারা যাওয়ার একমাস পরই পুত্রবধূর কোলজুড়ে আসে পুত্র সন্তান। নাতিডা পৃথিবীতে আইয়াও বাপের মুখটা দেখতে পারেনি। হায়রে কপাল। মোরা গরিব মানুষ, মোগো কপালে দুঃখ ছাড়া কি আছে।
পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পদ্মা গ্রামের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রহিম বেপারির ছেলে ইউসুফ বেপারি (২৩) ও আমিন বেপারির ছেলে বাইজিদ বেপারী (১৭)। খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই হলেও চলাফেরা আপন ভাইয়ের মতো। সে হিসেবে একটি নৌকায় দুজনেই মাছ ধরতেন। মৃত্যুও হয়েছে একইসঙ্গে। নিখোঁজের ছয়দিন পর ছোট ভাইয়ের মরদেহ পাওয়ার পর জানাজার সালাম ফেরানোর সময় জানাজাস্থলের কাছেই পাওয়া যায় বড় ভাইয়ের মরদেহ। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এর আগে বুধবার (৪ জানুয়ারি) রাত দেড়টার দিকে পাথরঘাটা থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম সুন্দরবনের পক্ষিদিয়া লাচি এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৩
এএটি