ফরিদপুর: আদালতের জারি করা স্থিতিবস্থা (১৪৪ ধারা) অমান্য করে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার প্রত্যন্ত বানেশ্বরদী গ্রামের প্রভাবশালী রেজাউল আলম রাজিবের আটকে দেওয়া বাঁশের বেড়ায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ৮টি পরিবারের অর্ধশত মানুষ। খবর পেয়ে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মঈনুল হক সাময়িকভাবে যাতায়াতের ব্যবস্থা করলেও সেখান দিয়ে কৃষি ফসল আনা-নেওয়া করা সম্ভব নয় বলে দাবি তাদের।
আর নগরকান্দা ইউএনও মঈনুল হক জানান, এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান শুধুমাত্র আদালতই দিতে পারে।
জানা গেছে, নগরকান্দার বানেশ্বরদী মৌজার ৬৪০ নম্বর দাগের ৮ শতাংশ জমি দাতা সোহের শরীফের কাছ থেকে কিনে নেন এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতা রেজাউল আলম রিজুর ভাই রবিউল আলম।
ওই জমির অন্য অংশীদারদের (পৈত্রিক) দাবি, রেজাউল আলম রিজু প্রভাবশালী হওয়ায় এবং অংশীদারেরা গ্রাম্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হওয়ায় ওই ৮ শতাংশের দলিলকে পুঁজি করে যাতায়াতের পথসহ পুরো জমির সামনের প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলেন। এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ওই জমির পৈত্রিক অংশীদারসহ ৮টি পরিবার।
অবরুদ্ধ পরিবারগুলো হলো- আয়ুব শেখ, ইমারত মোল্লা, বশার মোল্লা, জাহিদ মোল্লা, সুরুজী বেগম, জবেদা বেগম, বাশার মোল্লা ও ইউনুস মোল্লার পরিবার।
মো. ইমারত মোল্লা, বশার মোল্লা, জাহিদ মোল্লাসহ অবরুদ্ধ পরিবারের সদস্যদের দাবি, জমি দখলের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পৈত্রিক অংশীদারদের পক্ষে মো. ইমারত মোল্লা আদালতে ০৯ এপ্রিল আদালতে আবেদন জানালে ১৩ এপ্রিল আদালত ওই জমির ওপর স্থিতিবস্থা জারি করেন, যার নোটিশ ১৪ এপ্রিল জারি করা হয়। কিন্তু ১৫ এপ্রিল স্থিতিবস্থা ভঙ্গ করে শতাধিক লোকজন নিয়ে নালিশি জমির সামনের সম্পূর্ণ অংশে বাঁশের বেড়া দিয়ে জোর করে আটকে দেন রিজু গংরা। এতে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে ওইসব পরিবারের অর্ধ শতাধিক সদস্যকে।
সাদিয়া বেগম, রুমা আক্তারসহ অন্যরা জানান, রেজাউল আলমের পক্ষ থেকে বার বার হুমকি দেওয়ায় যেকোনো সময় হামলার শঙ্কায় করছেন অবরুদ্ধ পরিবারগুলো সদস্যরা। এতে শঙ্কিত এসব পরিবারের নারী ও শিশুরাও। তাই এসব পরিবারের সদস্যরা চান নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং বেড়া অপসারণ করে যাতায়াতের বহু বছরের পুরোনো পথ সচল রাখার।
যদিও রেজাউল আলম রাজিব জানান, তার ভাইয়ের কেনা জমিতেই বেড়া দিয়ে দখলে নিয়েছেন তারা। আদালতের নির্দশনা অমান্য করে দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানান, বেড়া নির্মাণ করা হলেও মানবিক কারণেই যাতায়াতের কিছুটা ব্যবস্থা করে রেখেছেন তিনি। তবে অবরুদ্ধরা তার কাছে গিয়ে আবেদন জানালে তিনি বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলেও জানান।
এদিকে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন জানান, যথা সময়ে স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে নোটিশ জারি করা হয়।
তিনি জানান, ঘটনার দিন খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায় এবং তাদের যাতায়াতের পথ রাখার ব্যবস্থা করে পুলিশ।
নগরকান্দা ইউএনও মো. মঈনুল হক জানান, অবরুদ্ধ করে রাখার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে সাময়িকভাবে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি জানান, স্থিতিবস্থা (১৪৪ দারা) ভঙ্গ করা হয়ে থাকলে তা আদালতকে জানালে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন আদালত। স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রেও আদালতের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৩
এসআরএস