লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সীমা রানী বর্মণ (৩৫) নামে এক গৃহবধূকে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে স্বামী হারাধন চন্দ্র ঘোষের বিরুদ্ধে।
তাকে বাড়ি থেকে তাড়াতে এক বছর ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে। প্রশাসন সীমা রানীর পাশে দাঁড়িয়েছে । প্রশাসন হস্তক্ষেপে অবশেষে ৬ দিন পর তালা ভেঙে বসতঘরে ঢুকতে পেরেছেন ওই গৃহবধূ।
ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাঞ্চনপুর গ্রামের ঘোষ বাড়িতে।
অভিযুক্ত হারাধন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভার কাঞ্চনপুর গ্রামের মৃত চিত্ত রঞ্জন ঘোষের ছেলে। ভুক্তভোগী সীমা রানী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সালদা নদীর নয়নপুর গ্রামের নেপু চন্দ্র বর্মণের মেয়ে। ২০১৮ সালে সীমাকে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করেন হারাধন। হারাধন ও সীমা দুজনেরই দ্বিতীয় বিয়ে এটি। সীমার আগের সংসারে এক মেয়ে রয়েছে।
এদিকে ঘরে ঢুকতে না পেরে স্বামীর বিরুদ্ধে রায়পুর থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন সীমা রানী। সে মামলায় হারাধনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া।
তিনি বলেন, সীমা রানীকে নির্যাতনের বিষয়ে তার স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে। হারাধনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
সীমা-হারাধনের সংসারের দ্বন্দ্ব মেটাতে বৈঠকে বসা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন দাশ।
তিনি বলেন, ২০ দিন আগে ওই পরিবারের উভয়পক্ষকে নিয়ে বসা হয়। সীমা রানীর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবেন বলে সম্মত হন হারাধন। কিন্তু সেই বৈঠকের পর হারাধন আর আসেননি। অবশেষে হারাধনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনি ব্যবস্থা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত গৃহবধূ সীমা রানী বর্মন ওই ঘরেই থাকবেন।
এদিকে গ্রেপ্তারের আগে অভিযুক্ত হারাধন সাংবাদিকদের কাছে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, আমার মা অসুস্থ থাকার কারণে বিপদে পড়ে সীমাকে বিয়ে করেছিলাম। আমার নামে ইউএনওর কাছে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে সে। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি বরং আমাকেই মারধর করেছে সে। তাই বাধ্য হয়ে বাসার মূল ফটকে তালা মেরেছি।
গৃহবধূ ও বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, বিয়ের ১৩ দিন পর থেকেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়। শ্বশুরবাড়ি থেকে ব্যবসার জন্য যৌতুক এনে দিতে না পারায় ননদসহ স্বামীর অমানসিক নির্যাতন শুরু হয় সীমার ওপর। গত এক বছর স্ত্রী ও কন্যাসন্তান ফেলে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যান হারাধন। মার্চ মাসে হারাধন বাড়িতে এসে স্ত্রীর সঙ্গে না থেকে বোনের ঘরে বসবাস শুরু করেন। এ অবস্থায় নানা অজুহাতে সীমার ওপর হারাধন, তার বোন, ভাগ্নেসহ তার পরিবারের লোকজন কয়েকদফা শারীরিক নির্যাতন করে।
গৃহবধূ সীমার অভিযোগ, তাকে এবং তার কন্যাকে কৌশলে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। বাড়ির দরজায় তালা দিয়ে রাখতেন স্বামী হারাধন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তিনি তালা ভেঙে তিনি ঘরে ঢুকতে পেরেছেন৷ এর আগে তার মেয়েকে নিয়ে ৬ দিন বাড়ির বাইরে অন্যের আশ্রয়ে থাকতে হয়েছিলো তাদের।
স্বামী হারাধন তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করেছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে নির্যাতনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সীমা রানী লিখিত অভিযোগ দেন। পরে হারাধনকে তার কার্যালয়ে ডাকা হয়। এতে হারাধন তার স্ত্রীকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান এবং তার পাওনা বুঝিয়ে দেবেন বলেও ইউএনওকে জানান।
এরপর গত ২০ দিনেও ইউএনওর কাছে আর যাননি হারাধন।
এদিকে মেয়েসহ স্ত্রী সীমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বসতঘরে তালা দিয়ে রাখে হারাধনসহ তার বোন ও ভাগ্নে। ঘরের বৈদ্যুতিক সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।
এ সময় গৃহবধূ ও তার মেয়ের দুর্ভোগের কথা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। অভিযান চালিয়ে বুধবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধায় সেই ভবঘুরে হারাধনকে আটক করে পুলিশ। সেইসঙ্গে হিন্দু ধর্মের কয়েকজন নেতা, পুলিশ ও সাংবাদিকের উপস্থিতিতে ওইরাতে হারাধনের বাড়ির তালা ভেঙে গৃহবধূ সীমাকে ঘরে প্রবেশের ব্যবস্থা করে উপজেলা প্রশাসন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
এসএএইচ