ঢাকা: ২০২০ সালে যেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ কোটি, তা ২০২৩ সালে তা আড়াই কোটিরও বেশিতে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও গতিশীল করতে ও ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরিতে এই শিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) বিকেলে রাজধানীর বনানীর মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক পার্কে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘মুজিবস বাংলাদেশ ফুড ফেস্টিভ্যাল’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আধার আমাদের এই ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের গাঙ্গেয় বদ্বীপ। হিউয়েন সাং, ইবনে বতুতা, মির্জা নাথান থেকে আজকের পর্যটকরা যারাই এ দেশে এসেছেন, সবাই মুগ্ধ হয়েছেন। সবাই এদেশের ঋতু প্রকৃতির, প্রাণের ও সংস্কৃতির প্রেমে পড়েছেন। যেকোনো দেশের পর্যটন বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সাতটি উপদান- সাগর, নদী, পাহাড়, বন, ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, ঋতু বৈচিত্র্য ও আতিথেয়তা এর সব ক'টিই বাংলাদেশের রয়েছে। এখন শুধু প্রয়োজন আমাদের অফুরন্ত এই সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো। প্রয়োজন আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পর্যটন গন্তব্যগুলো সঠিকভাবে, সুন্দরভাবে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পর্যটকদের নিশ্ছিদ্র নিরপত্তা নিশ্চিতের জন্য ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এবং অত্যাধুনিক ও নান্দনিক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল নির্মাণসহ সমগ্র দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অভূতপূর্ব উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশে সৃষ্টি হয়েছে উপযুক্ত পরিবেশ। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হওয়ায় ক্রমান্বয়ে দেশীয় পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সালে যেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ কোটি তা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে আড়াই কোটিরও বেশি।
প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে পর্যটনের অবদান বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। শুধু কক্সবাজারেই সাবরাং, নাফ ও সোনাদিয়া এই তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পার্ক তিনটির কাজ সমাপ্তির পর প্রতিবছরে এতে বাড়তি ২শ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। কক্সবাজারের খুরুশকুলে শেখ হাসিনা টাওয়ার ও এথনিক ভিলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া পর্যটকদের সহজ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিতে দেশের সব বিমানবন্দর উন্নয়নসহ কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হচ্ছে।
এছাড়া ঢাকা থেকে কক্সবাজারের ঘুমধুম পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে রেললাইন। দেশের পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এই মুহূর্তে পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে। পর্যটন মহাপরিকল্পনার ফলে পরিকল্পিত উন্নয়নের মাধ্যমে এই শিল্পের গুণগত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং স্পেলবাউন্ড কমিউনিকেশন লিমিটেডের পরিচালনায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী সব খাবার ও হাজার বছরের বর্ণিল সংস্কৃতির সংমিশ্রণে মুজিবস বাংলাদেশ ফুড ফেস্টিভ্যাল টেস্ট অব বাংলাদেশের আয়োজন করা হয়েছে। ৪ থেকে ৬ মে (৩ দিন) রাজধানীর বনানীর মোস্তাফা কামাল আতাতুর্ক পার্কে আয়োজিত হবে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ও বর্ণিল এই খাবারের উৎসব। বৃহস্পতিবার (৪ মে) বিকেলে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ০২১০ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২৩
এইচএমএস/এএটি