ঢাকা: ফুলের রাজ্যে অর্কিড এক অনিন্দ সুন্দর ফুল, যার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। আর বর্তমান সময়ে এসে দেশে প্রতিনিয়তই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অর্কিড।
জানা গেছে, বিশ্বে অর্কিডের ৩০ হাজারের বেশি প্রজাতি রয়েছে। আকর্ষণীয় রঙ, বিভিন্ন ধরনের গড়ন, সুগন্ধি, ঔষধি গুণাগুণ, দীর্ঘ স্থায়িত্বকাল এসব বৈশিষ্টের কারণে অর্কিড উদ্ভিদের জনপ্রিয়তা এখন বাড়ছে। এছাড়া বিশ্বে বর্তমানে কয়েক হাজার কোটি ডলারের অর্কিড বাণিজ্য হয়।
কৃষি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের আবহাওয়া অর্কিড চাষের উপযোগী। বাংলাদেশে অনসিডিয়াম, মোকারা, ভ্যান্ডা, ক্যাটেলিয়া, এরিডিস, ফেলেনপসিস নামে বিভিন্ন অর্কিড প্রজাতির চাষ হচ্ছে। এগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা সম্ভব। ইতোমধ্যে দেশে অনেকেই অর্কিড চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এ অর্কিড নিয়েই দেশের অন্যতম এক বৃহৎ অর্কিড খামার ও গবেষণাগার গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সম্প্রতি গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা যায়, বিশাল এরিয়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে অর্কিডের বাগান। টব ও ঝুলন্ত বাস্কেটে চাষ করা হচ্ছে অর্কিড। সেখানে লাল, গোলাপি, হলুদ সাদাসহ ফুটে আছে বাহারি রঙের অর্কিড।
অর্কিডের টবের ভেতরের তলদেশে কয়লা, খোয়া অথবা ঝামার টুকরা স্থাপন করা এবং উপরে নারিকেলের ছোবড়ার টুকরা ছড়িয়ে দেওয়া। এরপর প্রয়োজনমতো পানি সেচ দেওয়া হয়। এছাড়া বিশেষ ধরনের টব, কাঠের বা মাটির টবের পাশে ও নিচে বড় বড় ছিদ্রসহ অথবা বাঁশের ঝুঁড়িতেও অর্কিড চাষ করা যায় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ খামারে সারা বছরই জাতভেদে অর্কিডের ফুল ফোটে। তবে দেশীয় অর্কিড মার্চ-মে মাসে সর্বাধিক পাওয়া যায়। কিছু কিছু ডেনড্রোবিয়াম অর্কিড বছরে ২-৩ বার ফোটে। প্রতি গাছে জাতভেদে ২-৪টি স্টিক পাওয়া যায়। ফুলের স্থায়িত্বকালও অনেক বেশি। তবে ফুল সংগ্রহের পর পরই এর ডাটার গোড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ফুল বেশি দিন সতেজ থাকে বলে জানা যায়।
অর্কিড চাষ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সবুজে ভরপুর আমাদের এ উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে প্রায় ৮০টির অধিক অর্কিড প্রজাতি রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে দেশি-বিদেশি জাতের অর্কিড পাওয়া যায়, যা বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। এছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ে বৃক্ষমেলা, পুষ্পমেলা, অর্কিড শো এমনকি কৃষি মেলাতেও কিছু কিছু শৌখিন প্রদর্শনকারী তাদের স্টলে বাহারি জাতের কিছু অর্কিডের সমাবেশ ঘটান- যা সত্যিই প্রশংসনীয়। বাণিজ্যিক এবং চাষিরা খুব সহজেই কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে অর্কিড সংগ্রহ ও এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
তিনি বলেন, ফুলদানিতে দীর্ঘকাল সজীব থাকে বলে কাটফ্লাওয়ার হিসেবে অর্কিডের ব্যবহার সর্বাধিক। এছাড়া ছোট অবস্থায় এর গাছও শোভা বৃদ্ধি করে। ফুলের বিশ্বব্যাপী চাহিদা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। এটা এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এক উল্লেখযোগ্য পণ্য, যার মূল্য হাজার হাজার কোটি ডলার। পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল উৎপাদিত হয়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফুলের উৎপাদন ও বিপণন ক্রমে ক্রমে শিল্পপণ্য উৎপাদনসম বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে, যাকে এখন ‘পুষ্পশিল্প’ বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
এ কর্মকর্তার মতে, বর্তমানে ফুল শিল্পের সর্বাধিক বিকাশ ঘটেছে। বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু নানা রকম অর্কিড ফুল উৎপাদনের উপযোগী। উল্যাহ ও হেরেথ (২০০২) এর সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ বিভিন্ন অর্কিড ফুল ও গাছ যেমন- ডেনড্রোবিয়াম, অনসিডিয়াম, মোকারা, ভ্যান্ডা, ক্যাটেলিয়া, এরিডিস, ফেলেনপসিস এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর দাবি রাখে।
বাংলাদেশে রপ্তানিযোগ্য ফুলের মধ্যে অর্কিডের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হচ্ছে। এ বিশেষ ক্ষেত্রটি বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বিশ্ব ও অভ্যন্তরীণ বাজারে ফুলের চাহিদা অনুসারে সরবরাহ কম। তাই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশে ফ্লোরিকালচার শিল্প গড়ে তুলতে পারলে লাখ লাখ লোক আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। অপরদিকে অভ্যন্তরীণ ফুলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি