ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সাধারণত যেকোনো ওয়ার্ডে রোগী প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকরা কাছে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন। রোগীর কাছে গিয়ে প্রাথমিকভাবে রোগের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন।
শুধু জরুরি বিভাগের এক নম্বর কক্ষে দায়িত্বরত দুই চিকিৎসকের ক্ষেত্রে নিয়মটা একটু ভিন্ন। তারা মোটামুটি একটি খাঁচার ভেতর বসে থাকেন। ওই এক নম্বর কক্ষের উপরেই লেখা জরুরি চিকিৎসক।
এক নম্বর কক্ষে প্রবেশ করার আগে দেখা যায়, কিছু জায়গা গ্রিলের বাউন্ডারি দেওয়া। সেখানে চারটি অস্থায়ী অবজারভেশন বেড রয়েছে। সেগুলো পার হয়ে জরুরি চিকিৎসকদের কক্ষে প্রবেশের আগে দেখা যায় রয়েছে একটি থাই-কাচের দরজা। দরজাটি ধাক্কা দিলে খুলে যায়। দরজাটি হাসপাতাল অনুযায়ী খুবই সরু।
কক্ষে প্রবেশের দেখা যায় ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারের মতো সামনে বড় করে কাচের বেষ্টনী দেওয়া। এর ভেতরে দুই মেডিকেল অফিসারকে (জরুরি চিকিৎসককে) বসে থাকতে দেখা যায়। রোস্টার অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টা সেখানে চিকিৎসকরা দায়িত্বে থাকেন।
জরুরি বিভাগের এক নম্বর কক্ষে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কাজ কী? জরুরি বিভাগে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের টিকেট কেটে প্রথমেই যেতে হয় ১ নম্বর কক্ষের মেডিকেল অফিসারদের কাছে। চিকিৎসকরা রোগীর কাছ থেকে রোগ-উপসর্গ শুনে চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে রেফার করে থাকেন।
তাদের অবগত করা ছাড়া কোনো রোগী সরাসরি ওয়ার্ডে নিতে যেতে পারেন না, এমন নিয়মও নেই। তা ছাড়া রোগীদের টিকিটে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসারদের সই না থাকলে কোনো ওয়ার্ডের চিকিৎসকই চিকিৎসা দেন না।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার থেকে জানা যায়, জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় আনুমানিক এক হাজার থেকে ১২শ রোগী চিকিৎসার জন্য টিকেট কিনে থাকেন। এর মধ্য থেকে আনুমানিক ৩০০ রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসকের কক্ষের সামনে দীর্ঘ লাইন, জরুরি রোগীদের ভোগান্তি
শুধু জরুরি বিভাগেই এত রোগী আসার কারণে এক নম্বর কক্ষের সামনে রোগীদের লাইন লেগে যায়। কারণ জরুরি বিভাগের এক নম্বর কক্ষের মেডিকেল অফিসারদের পরামর্শ ছাড়া কোনো রোগী অন্য ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে পারেন না।
হাসপাতাল থেকে একটি সূত্র জানায়, ওই এক নম্বর কক্ষের চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো কক্ষ থেকে বের হয়ে রোগীদের কথা শুনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে রেফার করা। কিন্তু অধিকাংশ সময় তারা কক্ষ থেকেই বের হয় না। রোগী বহনকারী ট্রলিম্যানদের বক্তব্য শুনে সেই খাঁচায় বসেই মেডিকেল অফিসাররা রোগীদের রেফার করে থাকেন অধিকাংশ সময়। এ ছাড়া দরজা সরু হওয়ার কারণে রোগীদের ভিড় লেগেই থাকে।
রোববার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ১৩ বছর বয়সী সুমাইয়া আক্তার (ছদ্মনাম) ঢাকার বাইরে থেকে পরিবারের সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসেছে। জরুরি বিভাগ থেকে টিকিট কেটে ওই ১ নম্বর কক্ষের সামনে ট্রলির ওপরে শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকে সে। সুমাইয়াকে বহনকারী ট্রলিম্যান টিকিট নিয়ে খাঁচায় থাকা মেডিকেল অফিসারের রুমে গিয়ে রোগের বিবরণ জানান। তারপরে চিকিৎসক সেই অনুযায়ী রোগীকে পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি ওয়ার্ডে রেফার করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ট্রলিম্যান বলেন, সাধারণত ইমার্জেন্সির মেডিকেল অফিসাররা কক্ষ থেকে বের হন না। আমাদেরই রোগীর টিকিট নিয়ে ভেতরে গিয়ে রোগ সম্পর্কে তাদের জানাতে হয়। কারণ মেডিকেল অফিসারদের দরজা খুবই সরু। একসঙ্গে দুই রোগী প্রবেশ করতে পারেন না।
হাসপাতালে জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক (আএস) মো. আলাউদ্দিন বলেন, জরুরি বিভাগের বেশ কিছু কক্ষ সংস্কার করার জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আর মেডিকেল অফিসারদের ১ নম্বর কক্ষে কাচের বেষ্টনী করোনার সময় লাগানো হয়েছিল।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ১ নম্বর কক্ষে মেডিকেল অফিসারদের নিরাপত্তার জন্যই রুমটা প্রশস্ত করা হচ্ছে না। কারণ মেডিকেল অফিসাররা বাইরের লোকের মাধ্যমে হামলার শিকার হয়েছিলেন। হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়েও তিনগুণ বেশি রোগি চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এর জন্য একটু ভিড় থাকা স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৩
এজেডএস/আরএইচ