ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রংপুরে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা: যা বললেন বাদী

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৭ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
রংপুরে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা: যা বললেন বাদী

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছাড়ানোর অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে টিটো রহমান ও নাজমুস সাকিবের নামে মামলা দায়ের করা হয়েছে।  

রোববার রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন ইব্রাহীম আলী ও আনিস মিয়া। একই সঙ্গে মামলায় ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

মামলাটি আমলে নিয়ে রংপুরের সিআইডি পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ড. আব্দুল মজিদ। মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন শাম্মি আক্তার, আজগার আলী, আমিনুল ইসলাম, আহসান হাবীব জুয়েলসহ কয়েকজন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রুহুল আমিন তালুকদার।

অভিযুক্ত টিটো রহমান রাজধানীর জিগাতলা এলাকার মৃত ডা. মতিনুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। নাগরিক টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিজের পরিচয় দেন তিনি। নাজমুস সাকিব সবুজবাগ এলাকার জলিলুর আজমের ছেলে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নাজমুস সাকিব নিজের পরিচয় দেন নাগরিক টিভির বার্তা সম্পাদক হিসেবে।  

মামলা দায়েরের পর রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, মামলাটা কেন করলাম? একজন নাগরিক হিসেবে। এই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা দল আওয়ামী লীগ। প্রাচীনতম দল, বৃহত্তম দল, যে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখন সেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার সুনাম নষ্ট করার জন্য, তাকে বেকায়দায় ফেলার জন্য, দলকে নষ্ট করার জন্য, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি মনে করি তাদেরকে অবশ্যই গ্রেপ্তার করতে হবে, শিক্ষা দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। অবশ্যই আমরা চাইব, প্রশাসনের কাছে, অতি শিগগিরই এই আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এটা আমাদের দাবি। মামলাটা করার কারণ হলো ব্যথা পেয়েছি নাগরিক হিসেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন, চিন্তাই করা যায় না। সেই নেত্রীর নামে কটাক্ষ করবে, অপপ্রচার চালাবে, ভাবমূর্তি নষ্ট করবে, অনলাইনে একটি চ্যানেল, অনুমোদনবিহীন চ্যানেল, নাগরিক চ্যানেল, সজীব ওয়াজেদ জয়, আমাদের স্বপ্নদ্রষ্টা, তার নামে কথা বলবে, এটা আমরা মেনে নিতে পারি না। এজন্যই আজকের এই মামলা। আমাদের চাওয়া, তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করতে হবে। তারা দেশের বাইরে বসে আছে। একজন কানাডা, একজন আমেরিকায়। দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এদের প্রতিহত না করলে তো যারা দেশের জন্য জীবন দিলেন তারা তো শান্তিতে থাকতে পারবেন না।  


মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আসামিরা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গুজব, আপত্তিকর, কুরুচিপূর্ণ, মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও রাষ্ট্রবিরোধী তথ্য বারবার প্রচার করছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার নয়; তার আত্মীয় স্বজন, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেষ্ঠ্য নেতা এবং দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধেও বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে আসামিরা। এমনকি দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়েও প্রতিনিয়ত গুজব ছড়াচ্ছে তারা।  

মামলার বাদী বাবু তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যারা কটূক্তি করে ইউটিউবে লাইভ করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমি দ্রুত তাদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানাই।

অপরদিকে, একই আদালতে একই অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়েরের আবেদন করেছেন রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ হোসেন।  আবেদনটি সোমবার (৮ মে) শুনানির জন্য রেখেছেন আদালত।  

জানা গেছে, কানাডা থেকে প্রচারিত নাগরিক টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে টিটো রহমান। নাজমুস সাকিব নিজের পরিচয় দেন বার্তা সম্পাদক হিসেবে। ধর্ষণ ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে দায়ে মামলা হওয়ার পর দেশ ছেড়ে কানাডায় পালিয়ে যান তারা।  সেখানে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে। আনলাইন প্ল্যাটফর্মে রাষ্ট্র, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে গুজব ছড়ানো শুরু করেন তারা। টিটো রহমানের পুরো পরিবারই স্বাধীনতাবিরোধী। তার দাদা একাত্তরের ঘাতক ছিলেন, বাবা ছিলেন ছিঁচকে রাজাকার। আর মোস্তাফিজুর রহমান ছোটবেলা থেকেই বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট লোকদের সঙ্গে উঠাবসা করতেন। তবে রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরে মোস্তাফিজুর রহমান দিনাজপুরে একজন মাদকসেবী এবং নারী নিপীড়ক হিসেবে পরিচিত ছিল। ইভটিজিংয়ের জন্য একাধিকার মোস্তাফিজুর রহমান শাস্তি পেয়েছিল। আর সর্বশেষ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়ার সময় এক শিক্ষার্থী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন।  

অন্যদিকে, রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় ২০১১ সালে নাজমুস সাকিবের বিরুদ্ধে পাঁচ বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় মামলার পরই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান নাজমুস সাকিব। মামলার এজাহারে বলা হয়, রাজধানীর বাসাবোর সবুজবাগ এলাকার ২৮ নম্বর মায়াকাননের পেছনে তিনটি বাড়ির পর একটি টিনশেড ঘরে পরিবারের সঙ্গে থাকত শিশুটি। পিতা সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। ঘটনার দিন ফুটফুটে ছোট্ট শিশুটিকে চকলেটেরে লোভ দেখিয়ে ২৮ নম্বর মায়াকাননে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান মাদকাসক্ত নাজমুস সাকিব। এরপর ছাদে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হলে শিশুটিকে নিচতলার গ্যারেজে রেখে পালিয়ে যান নাজমুস সাকিব।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অনলাইন নাগরিক টিভি নামের ইউটিউব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ তার পরিবার ওবায়দুল কাদের আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটূক্তি করায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে।  

তিনি আরো জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।  

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।