ঢাকা: নিশিকান্ত বিশ্বাস। গ্রামের বাড়ি মাগুরায়।
সোমবার (৮ মে) সংঘাতকবলিত সুদান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে সকাল সাড়ে ১০টায় দেশে ফেরেন ১৩৬ জন বাংলাদেশি। নিশিকান্ত তাদের একজন।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, দালালের সহায়তায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে সুদানে গিয়েছিলেন। টাইলস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন তিনি। সেখানে যাওয়ার আগে ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন কথায় কাজে মিল নেই। ২৫ হাজার টাকা বেতনে বাধ্য হয়ে কাজ করেন তিনি। এরমধ্যেই পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে যায়। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। তবে সুদানে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফিরতে পেরেছেন।
নিশিকান্ত বলেন, উরে সর্বনাশ! আমাদের ফ্যাক্টরিতে প্রতিদিন ৫-৬ শ গুলি পড়তো। ওরা-ওরাই (সুদানিরা) মারামারি করছে। পাবলিক সামনে পালিই মারতিছে। লুটপাট, ডাকাতি করতিছে। খাওয়ার কিছু নেই। আমি নিজেও ডাকাতির শিকার হয়েছি। ওগের টার্গেট মোবাইল। জামা, প্যান্ট, চাল-ডাল-আলু, যা পাইছে, সব নিয়ে গেছে। আমার সর্বস্ব নিয়ে গেছে। পায়ে বাড়ি দিছিল। বাম পায়ে আমার সমস্যা হয়ে গেছে। একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। চলতি বছরের জানুয়ারির ২ তারিখ ঢুকছি। ভাঙতি মাসের কিছু বেতন পাইছি। যুদ্ধ বাঁধিছে পর্যন্ত খাওয়া নেই-দাওয়া নেই। পরে সৌদি আইসা দুটো ভাত খাইছি।
প্রায় একইরকম কথাবার্তা বলেছেন মো. সবুজ। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। ২০১৯ সালে তিনি সুদানে যান। ৪ বছর সেখানে থাকলেও কিছুই নিয়ে ফিরতে পারেননি। ফিরেছেন নিঃস্ব হয়ে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ওখানে ভারতের দূতাবাসে আমরা আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানে থেকে একটি পুরোনো লুঙ্গি আর বিছানার চাদর নিয়ে এসেছি শুধু। আর, সব ডাকাতি হয়ে গেছে। আমার পিঠে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে ওরা।
সুদান ফেরত আরও একাধিক বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলেও এমন তথ্যই জানা গেছে। সকাল সাড়ে ১০টায় ১৩৬ জন বাংলাদেশীকে নিয়ে বিমানের একটি ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করে। বিমানবন্দরে তাদের স্বাগত জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
সুদানফেরত বাংলাদেশিদের জন্য প্রবাসীদের প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে একটি নীতিমালা হবে বলে জানিয়েছেন জানিয়েছেন মন্ত্রী। সেই সাথে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যয় মেটানোর জন্য ২ লাখ ডলারের তহবিল অনুমোদন নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সুদান থেকে ১৩৬ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৩
এমকে/আরএইচ