ঢাকা: উচ্চ আদালতে শুনানিতে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করা। পাশাপাশি মামলার সকল আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন।
সোমবার (৮ মে) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় সংগঠনের পক্ষ থেকে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুব্যবস্থা করাসহ ১৩ দফা দাবি জানানো হয়।
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, সরকারি হিসেবে সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধ্বসে ১১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান এবং আড়াই হাজার শ্রমিক আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আহত হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সহস্রাধিক শ্রমিক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শ্রমিকদের দুর্ভোগ, দুর্দশা ও মানবেতর জীবনের চিত্র সকলের চোখের আড়ালে পরে যাচ্ছে। যাদের মধ্যে অন্ততঃ একহাজার শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করে বেচে আছেন। এই দুর্ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয়, সে সময় বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয়।
তিনি আরও বলেন, ভবন মালিক সোহেল রানা ৫টি গার্মেন্টস মালিক। দেশব্যাপী তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হলে সরকার বিভিন্ন আইনে ৩টি মামলা দায়ের করেন, যা গত ১০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে সোহেল রানা ব্যতিত মামলার বাকি সকল আসামি জামিনে আছেন। কিছুদিন আগে সোহেল রানার জামিন মঞ্জুর হলে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে সোহেল রানা মুক্তি না পেলেও সোমবার তার জামিন বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশ থেকে সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করার জন্য জোরদাবি জানাচ্ছি।
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ হতে ১৩ দফা দাবিগুলো হলো-
১) রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ মামলার সকল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।
২) ৮ই মে শুনানিতে সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করার জোর দাবি জানাই।
৩) রানা প্লাজা আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও পূর্ণবাসনের সু-ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুব্যবস্থা করতে হবে।
৫) সকল ক্রেতা ও ব্র্যান্ডকে একোর্ড চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।
৬) ন্যূনতম মজুরি ২৩,০০০/- হাজার টাকা করতে হবে।
৭) ইপিজেডসহ সকল কারখানায় অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন ও যৌথদরকষাকষি করার স্বাধীনতা দিতে হবে।
৮) সকল ক্রেতা ব্যান্ডকে ও মালিকদের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত বামার অংশগ্রহণ করতে হবে।
৯) সকল শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত বীমার আওতায় আনতে হবে।
১০) সকল শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
১১) সকল শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১২) পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে।
১৩) নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন ও আইএলও সনদ ১৯০ কর্মক্ষেত্রে অনুস্বাক্ষর করতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার।
সমাবেশে আরোও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাদিজা আক্তার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উর্মি আক্তার, সহ-সাধারণ সম্পাদক সৈকত চৌধুরী, আইন ও যৌথ দরকষাকষি বিষয়ক সম্পাদক ইয়াহিয়া খান, হপলুন এ্যাপারেলস লি. সম্মিলিত শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক হালিমা বেগম, আর এমজি ওয়ার্কার্স ফোরামের চেয়ারম্যান লিলি বেগম, ফাউন্টেন গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারিং কো. লি. সম্মিলিত শ্রমিক ইউনিয়ন অর্থ সম্পাদক জলি আক্তার ও ন্যাচারেল ডেনিমস লি. সম্মিলিত শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজমা আক্তার।
উক্ত সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রীরা বিভিন্ন এলাকার ৪০টি ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ আরো শ্রমিকগণ।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে, রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করাসহ মামলার সকল আসামীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৩
ইএসএস/ এসএম