ঢাকা: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৩ দেওয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে বাংলা একাডেমি।
সোমবার (৮ মে) বেলা ১১টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। একক বক্তৃতা দেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী মাহিদুল ইসলাম ও সায়েরা হাবীব। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী বুলবুল ইসলাম ও কমলিকা চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র গবেষণায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশিষ্ট শিল্পী শীলা মোমেনকে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৩ দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকের হাতে পুষ্পস্তবক, সনদ, সম্মাননা-স্মারক ও পুরস্কারের অর্থমূল্য দুই লাখ টাকার চেক তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, রবীন্দ্রনাথ আমাদের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গলের বাতিঘর। আমরা রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও জীবন থেকে পাই সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এবং ঋদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয় প্রেরণা।
অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে জমিদারতন্ত্রের মিথ আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আগাগোড়া একজন স্বনির্মিত মানুষ। তিনি পারিবারিক ব্যবসায়ের সূত্রে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এসেছেন। এসব অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা যেমন করেছেন তেমনি পূর্ববঙ্গের এ সাধারণ মানুষই তার সাহিত্যকে দান করেছে নতুন গতিপথ।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, রবীন্দ্রনাথ আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনজুড়ে ব্যাপ্ত আছেন। তার চিন্তা ও মানবিক আদর্শ আমাদের চলার পথকে কুসুমাস্তীর্ণ করে, আলোকের ঝর্ণাধারায় হাত ধরে নিয়ে চলে।
রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে শীলা মোমেন বলেন, বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কার প্রাপ্তি এক জীবনের অনন্য অর্জন। রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করে তাকে অন্বেষণ করে চলেছি, এ অন্বেষণের যেন কোনো শেষ নেই, আছে আনন্দধারায় অনন্ত অবগাহন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক কাজী রুমানা আহমেদ সোমা।
উল্লেখ্য, প্রথিতযশা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শীলা মোমেন ১৯৫৩ সলের ১২ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শিল্পী শীলা মোমেন শৈশব থেকেই সংগীতচর্চা করেন। সংগীতগুণী ওয়াহিদুল হক, সংগীতগুরু শৈলজারঞ্জন মজুমদার, উচ্চাঙ্গসংগীত চর্চায় পণ্ডিত বিজয় কিচলুসহ শান্তিনিকেতন সংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে তিনি রবীন্দ্রসংগীত তালিম নিয়েছেন। শিল্পী শীলা মোমেন ১৯৭৬ সাল থেকে শিশু প্রতিষ্ঠান ফুলকির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে শিশুশিক্ষা ও শিশুর মানস বিকাশে অবদান রেখেছেন। পঞ্চাশ বছরের রবীন্দ্রসংগীত সাধনায় শীলা মোমেন একজন শিক্ষক হিসেবেও সার্থক। ফুলকির সাংস্কৃতিক স্কুল ‘সোনার তরী’ এবং নিজ সংগঠন ও শুদ্ধ সংগীত চর্চার প্রতিষ্ঠান ‘রক্তকরবী’র প্রশিক্ষক হিসেবে নবপ্রজন্মের শিক্ষার্থীদের শুদ্ধভাবে রবীন্দ্রসংগীত ও বাংলা গানের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির সংগীত বিষয়ক বইয়ের রবীন্দ্রসংগীত অংশের রচয়িতা। তিনি রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে ৫টি গবেষণামূলক অ্যালবামের কাজ সম্পন্ন করেছেন। মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থার সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্প এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তিনি গান পরিবেশন করেন। রবীন্দ্রসংগীত চর্চা ও প্রসারে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শিল্পী শীলা মোমেনকে বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৩ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৩
এইচএমএস/আরবি