ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মজুচৌধুরীরহাট-ইলিশায় নৌযান চলাচল বন্ধ, ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা পার 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
মজুচৌধুরীরহাট-ইলিশায় নৌযান চলাচল বন্ধ, ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা পার 

লক্ষ্মীপুর: ভোলার দৌলতখা উপজেলার বাসিন্দা হাফেজ মহিউদ্দিন। তিনি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার একটি মাদরাসার শিক্ষকতা করেন।

বাড়িতে তার মা মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। তাই জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি যেতে হবে তাকে। গাড়িতে করে হাজীগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাটে আসেন গতকাল শুক্রবার (১২ মে) রাত ৯টার দিকে। এসে দেখেন লঞ্চ বা সি-ট্রাকসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েন তিনি। কোনোমতে রাত কাটিয়েছেন সি-ট্রাকে।  

উপয়ান্তর না পেয়ে শনিবার (১৩ মে) ভোরে মজুচৌধুরীর হাট থেকে চলে যান পাশের উপজেলা কমলনগরের মতিরহাট মাছ ঘাটে। ঘণ্টা খানেক অপেক্ষার পর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ট্রলারযোগে রওনা হতে পেরেছেন ভোলার উদ্দেশে। উত্তাল নদীতে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও স্বস্তির ছোঁয়া দেখা মিলেছে তার চোখে-মুখে। মৃত্যুপথযাত্রী তার গর্ভধারিনী মায়ের মুখ হয়তো দেখার সুযোগ পাবেন তিনি।  

শনিবার সকালে মতিরহাটে দেখা মিলে পারভেজ নামে ভোলাগামী আরও একজনের সঙ্গে। তার বাড়ি কমলনগরের হাজিরহাট এলাকায়। ভোরে ভোলা যাবার উদ্দেশে মজুচৌধুরীর হাটে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে। পরে মতিরহাট হয়ে ট্রলারযোগে ভোলার উদ্দেশে রওনা হন তিনি।  

পারভেজ জানান, তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। শুক্রবার ছুটি থাকায় বাড়িতে আসেন। শনিবার সকাল ৯ টা থেকে তার অফিস শুরু হয়। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকার কারণে মজুচৌধুরীর হাট থেকে নৌযান চলাচল না করায় তার মতো হাজারো যাত্রী বিপাকে পড়েন।  

হাফেজ মহিউদ্দিন এবং পারভেজসহ আটকা পড়া অনেকে বাংলানিউজকে বলেন, লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাটে ভোলা-রবিশালগামী এক হাজারেরও বেশি যাত্রী আটকা পড়েছেন। ঘাটে চারটি মরদেহ ছিল। ফেরি চলাচল না করায় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো ঘাটে অপেক্ষমান ছিল।  

ফলে মরদেহ নিয়ে বিপাকে পড়েন তাদের স্বজনরা। এছাড়া বিভিন্ন বয়সী পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরা আটকা পড়েছেন। এতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে তাদের। অনেকেই শুক্রবার রাতে ঘাটে এসে ভিড় করেছেন। কখন তারা নদী পার হতে পারবেন- তা এখনও অজানা।  

চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল বাংলানিউজকে বলেন, ঘাটে হাজারো যাত্রী আটকা পড়ে আছেন। তারা গতরাতে ভোলা-বরিশাল যাবার উদ্দেশে এ ঘাটে আসেন। কিন্তু নৌযান বন্ধ থাকায় তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। সকালে ঘাটে চারটি মরদেহ ছিল। সেগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত আটকা পড়া প্রায় হাজারো যাত্রী অবশেষে নদী পার হতে পেরেছেন। ট্রলার বা মাছ ধরার নৌকায় করে ঝুঁকি নিয়ে তারা নদী পাড়ি দেন।  

জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপোসাগরের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এতে লক্ষ্মীপুরসহ উপকূলীয় জেলাগুলোকে ৮ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল রুটের মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাট থেকে সব নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের ফেরি চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মেঘনা নদী হয়ে মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চ ও ফেরিঘাট ভোলা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে।

মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটের ট্রাফিক সুপার ভাইজার শরীফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ রুটে ৫টি লঞ্চ রয়েছে। পরবর্তীকালে নির্দেশনা দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সবগুলো লঞ্চই ঘাটে রয়েছে। এর মধ্যে ২টি আমাদের ঘাটে, ২টি বরিশাল ও ১টি ভোলার ইলিশাঘাটে রয়েছে। ট্রলার, স্পিডবোটও বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের ম্যানেজার পারভেজ খান বাংলানিউজকে বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ রুটে ৬টি ফেরি চলাচল করে। গতকাল শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ফেরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীকালে নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।