বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য বিপদ সামনে রেখে বাগেরহাটে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় র্যাব-৬ এর অধিনায়ক (সিইও) লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ, বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক, সিভিল সার্জন ডা. জালাল উদ্দিন আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল, সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুজ্জামান, বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাহ-ই-আলম বাচ্চু, বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক গোলাম সরোয়ারসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান, প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মোখায় ক্ষয়ক্ষতি থেকে জনগণকে রক্ষা করতে বাগেরহাটের মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা এই চারটি উপজেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এই উপজেলার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে সুপেয় পানি, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, টর্চ লাইট, ইলেক্ট্রিক করাতসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন জেলার এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শরিফুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় আগামী সভাগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থিত থাকা এবং মোখা মোকাবিলায় কর্মস্থলে থেকে খামারিদের সেবা দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাগেরহাট-২ (কচুয়া-সদর) আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে দুর্যোগ প্রশমন ও দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য নানা কাজ করে যাচ্ছে। এরপরেও কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রতিটি জেলারই আলাদা আলাদা সমস্যা থাকে। বাগেরহাটে বেশকিছু এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই এবং কিছু বেড়িবাঁধ রয়েছে যা ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই, সেসব জায়গায় পর্যায়ক্রমে বেড়িবাঁধ করা হবে। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবক, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক কর্মীসহ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
মোখা পরবর্তী ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন এই তরুণ সংসদ সদস্য। মোখা মোকাবিলায় বাগেরহাটের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরা হয় এই সভায়।
সভার তথ্য অনুযায়ী, বাগেরহাটে ৮৪টি মেডিকেল টিম, ১হাজার ৯২০ জন সিপিপি'রসদস্য, ৫০০ জন রেড ক্রিসেন্ট সদস্য, রোভার, বিএনসিসি, স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, এনজিও, প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন ও প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
৪৪৬টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৭৫ জন আশ্রয় গ্রহন করতে পারবে। এছাড়া প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ দেওয়ার জন্য ৫২২ দশমিক ৮০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে সতর্ক থাকা এবং সঠিক সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলায় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মোংলা সমুদ্র বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৪ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৩
আরএ