লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে প্রায় ৩০ সেকেন্ডের কালবৈশাখী ঝড়ে দুটি বাড়িতে ছোট-বড় অন্তত ১৪টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এসময় কয়েক হাজার গাছপালা ভেঙে পড়ে।
সোমবার (১৫ মে) রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের পিয়ারাপুর গ্রামের শামসুদ্দিন পাটওয়ারী বাড়ি ও আবদুল্যাপুর গ্রামের বাবুল ড্রাইভারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঝড়ে পাটওয়ারী বাড়ির সাতটি বসতঘর এবং আবদুল্যাপুর গ্রামের বাবুল ড্রাইভারের বাড়িতে দুটি বসতঘরসহ মোট নয়টি বড় ঘর ও পাঁচটি রান্নাঘর এবং গোয়ালঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
তিনি জানান, ঝড়ে পাটওয়ারী বাড়ির বাবুল, রুবেল, শাহজাহান, প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীর, খোরশেদ, নাছির, নুর ইসলাম এবং আবদুল্লাহ পুর গ্রামের ছিদ্দিক ও বাবুল ড্রাইভারের বসতঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
এছাড়া লোকমান পাটওয়ারীর একটি গরু গাছচাপা পড়ে মারা গেছে। ঝড়ের আঘাতে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার খানেক ফলদ ও বনজ গাছপালা ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা প্রশসানের কাছে জমা দেওয়া হবে।
বিধ্বস্ত একটি ঘরের বাসিন্দা নাসরিন জাহান নিপু বাংলানিউজকে বলেন, রাতে আমি ঘরে বসে লেখাপড়া করছিলাম। হঠাৎ বাতাস তারপর শিলাবৃষ্টিঅ এরপর মুহূর্তেই ঝড়ো বাতাস প্রবাহিত হয়। এতে আমাদের বসত ঘরের বেড়া এবং দরজা ভেঙে যায়। ঘটনার সময় আমরা ঘরের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।
একই বাড়ির কিশোরী পপি আক্তার বলেন, ঝড়ে গাছচাপা পড়ে আমাদের লাখ টাকা মূল্যের একটি গাভীন গরু মারা গেছে। গরু রাখার ঘরটিও বিধ্বস্ত হয়েছে। আমাদের অনেকগুলো গাছপালা ভেঙে গেছে।
বৃদ্ধ মো. নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চারজন আমাদের ঘরের মধ্যে ছিলাম। হঠাৎ বাতাস শুরু হলে আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। মুহূর্তেই আমাদের ঘরটি মাটির সঙ্গে মিশে যায়। ঘরের আশপাশের গাছপালাগুলো ভেঙে গেছে।
রিকশাচালক বাবুল হোসেন বলেন, ঝড়ের আগে ঘরের ভেতরে ছিলাম। ঝড়ে ঘরটি ভেঙে যায়। এতে আমার শিশুপুত্র আটকা পড়ে তার হাত কেটে যায়। ৫ থেকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে যায়।
অটোরিকশাচালক রুবেল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঝড়ের আগে আমি ঘর থেকে বের হয়ে যাই। ঘরের ভেতরে আমার শিশুকন্যা এবং স্ত্রী ছিল। ঝড় শুরু হলে মুহূর্তেই ঘরের একাংশ আমার গায়ের ওপর পড়ে। সেখান থেকে কোনমতে বেরিয়ে আমার শিশু এবং স্ত্রীকে নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমাদের ঘরটি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোবারক হোসেন, লোকমান হোসেন বলেন, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন অসহায় হয়ে পড়েছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে তারা। প্রশাসন যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করে, আমরা সে দাবি জানাই।
ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল হাসান রনি বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখাতে আমাদের কোনো ক্ষতি না হলেও হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে আমাদের এলাকার দুটি বাড়িতে বসতঘর, গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। একটি গরুও মারা গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সবাই নিম্ন আয়ের লোক। সরকারিভাবে এদের যেন সহায়তা করা হয়, আমরা সে ব্যবস্থা করবো।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে তাদের সহায়তা করা হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকে সৃষ্টিকর্তা আমাদের রক্ষা করেছেন। কিন্তু পিয়ারাপুরে কয়েকটি পরিবার গতরাতের ঝড়ের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওইসব পরিবারকে আর্থিক সহয়তা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৩
আরএ