ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হাসপাতালের বিছানায় ধুঁকছেন সেই রিকশাচালক

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
হাসপাতালের বিছানায় ধুঁকছেন সেই রিকশাচালক

রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বিছানায় ধুঁকছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রিকশা চালানো সেই মাইনুরজ্জামান সেন্টু (৫৫)। সেখানেই এখন চিকিৎসা চলছে তার।

রিকশা চালানো বন্ধ তাই বাড়ির চুলাও বন্ধ।  

জীবনসঙ্গী স্ত্রীও হাসপাতালে গিয়ে তার পাশে দিন-রাত কাটাচ্ছেন। খাচ্ছেন হাসপাতালের সরবরাহকৃত খাবার।  

রোববার (১৪ মে) রাতে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালের বিছানায় থাকা অসুস্থ সেন্টু বাংলানিউজকে জানান, রিকশা চালিয়ে বাড়ি ফেরার পর রোববার রাতে তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তাকে জরুরিভাবে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে এ-ই প্রথম নয়, এমনভাবে সব সময়ই তাকে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। তিনি সপ্তাহে একটু সুস্থতা অনুভব করলে বাড়ি ফিরে যান। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রিকশা চালান। তারপর বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও ভর্তি হন। এভাবে অর্ধেক মাস হাসপাতাল ও অর্ধেক মাস বাড়িতে কাটে তার। বিচিত্র এই জীবন সংগ্রাম চলছে গেল সাত বছর থেকেই। একটু সুস্থ হলেই অক্সিজেন, ওষুধ নিয়ে তার খাবারে সন্ধানে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামেন। অসুস্থ হলে চলে যান হাসপাতালে। এরপর কারও কাছে হাত পাততে বা ভিক্ষাবৃত্তি করতে রাজি নন তিনি। যতদিন দেহে শ্বাস-প্রশ্বাস চলবে ততদিন বাঁচার জন্য লড়াই করে যাবেন।

মাইনুরজ্জামান সেন্টু জানান, তিনি রাজশাহী নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা। তার বয়স ৫৫ বছর। দীর্ঘ সাত বছর ধরে ফুসফুসের জটিল সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন।

তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তবে তাদের সবার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা আলাদা আলাদা সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তাই এ বয়সেও চরম অসুস্থ শরীর নিয়েও রিকশা চালিয়ে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে হয় সেন্টুকে। এর পাশাপাশি অক্সিজেন সিলিন্ডারের যোগান দিতে হয় তাকেই। কারণ যতক্ষণ অক্সিজেন চলে ততক্ষণই ভালো থাকেন তিনি। আর প্রতিদিন তিনটা করে অক্সিজেন সিলিন্ডার লাগে সেন্টুর।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের টাকা কীভাবে জোগাড় করেন তা তিনি আর আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না।  

এর আগে ২০১৫ সালে তার সিঙ্গারা-পুরির দোকান ছিল। সেই দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ২০১৬ সালের দিকে এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি (ঋণ) নেন। আরও কিছু ঋণ করে ৮০ হাজার টাকায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কেনন। তারপর থেকে ওই রিকশা চালান। প্রতিদিন ওষুধের জন্য তার প্রায় ৭শ টাকা লাগে। তার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর খাওয়া-দাওয়া ও থাকার খরচ তো আছেই। কী করবেন মাঝেমধ্যে দিশাহারা হয়ে যান। অবর্ণনীয় কষ্ট আর চাপা কান্না বুকে নিয়ে এভাবেই দিনলিপি চলে তার।

তবে আজই প্রথম সেন্টুর পাশে দাঁড়ালেন ফারাজ করিম চৌধুরী। সেন্টু জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার নিদারুণ এই জীবন সংগ্রামের খবর পড়ে ফারাজ করিম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি তার অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার জন্য ৫৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন বুধবার (১৭ মে)। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় সেন্টু ও তার স্ত্রী চম্পা বেগম ফারাজ করিমের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। এ সময় তারা ফারাজের জন্য প্রাণ ভরে দোয়াও করেন।

চট্টগ্রাম-৬ আসনের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং ফেসবুক সেলিব্রিটি।

এছাড়া সমাজসেবক হিসেবেও পরিচিত এবং সমান জনপ্রিয়। রিকশাচালক সেন্টুর নিউজ ও ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তা ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপরই তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন ফারাজ।

রিকশাচালক সেন্টু বর্তমানে রামেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।

আরও পড়ুন>>>

অক্সিজেন নিয়ে রিকশা চালানো সেই সেন্টুর পাশে ফারাজ করিম

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।