ঢাকা: ঢাকার কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা হলেও এটাকে ভুল তথ্য হিসেবে দেখছে সরকার। একই সঙ্গে এই ইস্যু নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো বক্তব্য দিতেও আগ্রহী নয়।
ঢাকার ছয়টি দেশের কূটনীতিকদের বাডতি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের পর এই ইস্যুতে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তবে গত ১৫ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টির ব্যাখ্যা দেয়। সেই ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়, ‘কিছু কিছু গণমাধ্যমে ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বা বাংলাদেশস্থ বিদেশি কুটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রদান নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য আমাদের নজরে এসেছে। উল্লেখ্য যে, প্রতিটি দূতাবাসেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা বিধান অব্যাহত রেখেছেন এবং রাষ্ট্রদূতদের পুলিশ প্রদত্ত গানম্যান নিয়োজিত আছেন। এই কারণে নিরাপত্তা প্রত্যাহার সম্পর্কিত এই বিভ্রান্তকর খবরটি সঠিক নয়। ’
গত ১৮ মে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) মহাসচিব পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতার পক্ষে ঢাকার কূটনীতিকদের ব্রিফিং করা হয়। তবে সেই ব্রিফিংয়ে কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি ওঠেনি। আর কূটনীতিকদের ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, কূটনীতিকদের নিরাপত্তার ইস্যুতে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। আমরা এর ব্যাখ্যা দিয়েছি, আমার মনে হয় এটা এখানেই শেষ হওয়া উচিত।
আগামী সপ্তাহে দূতাবাসে নোটভারবাল
ঢাকার সব মিশনেই সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল আছে। তবে বাড়তি নিরাপত্তা চাইলে কূটনীতিকরা আনসার ভাড়া করতে পারবেন। এ সংক্রান্ত একটি নোটভারবাল আগামী সপ্তাহে ঢাকার সব মিশনেই পাঠানো হবে। সেখানে আনসার সদস্য নিয়োগের বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হবে৷ এ লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আনসার দপ্তর কাজ করছে।
নিরাপত্তা ইস্যুর মধ্যেই যোগ হলো পতাকা ব্যবহার
কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা প্রত্যাহারের মধ্যেই পতাকা ব্যবহার নিয়েও সতর্ক করেছে সরকার। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এই ইস্যুতে নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলেছেন, আমি নিউ ইয়র্কে কাজ করেছি। সেখানে কখনোই কূটনীতিকদের গাড়িতে কোনো পতাকা ওড়ানোর সিস্টেমই নাই। আর অনেক দেশ আছে যেখানে রাষ্ট্রীয় মিটিংয়ে গেলেই কূটনীতিকরা শুধু পতাকা উড়িয়ে যেতে পারবেন। আমি যদি এখন শপিং-এ যাই বা ব্যক্তিগত কাজে যাই তখন তো আমি পতাকা ওড়াবো না। এটা রাষ্ট্রদূতদের সেন্সের ওপর নির্ভর করে। এদিকে গত ১৮ মে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে যে কূটনীতিকদের ব্রিফিং করা হয়, সেই ব্রিফিংয়ে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও যোগ দেন।
ব্রিফিংয়ে সব ২৪ দেশের কূটনীতিক অংশ নেন। এদের মধ্যে ২৩ কূটনীতিক পতাকাযুক্ত গাড়িতে এলেও পিটার হাস যোগ দেন পতাকাবিহীন গাড়িতে।
নিরাপত্তা ইস্যুতে কূটনীতিকরা মুখ খোলেননি
কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-প্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দূতাবাস ও কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার যে বাধ্যবাধকতা আছে, তা বজায় রাখার ওপর জোর দেন তিনি।
ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী নিরাপত্তা দেওয়া হবে
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন, ঢাকার কূটনীতিকরা বাড়তি নিরাপত্তা না পেলেও ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী অফিস ও বাসায় আগের মতোই যথাযথভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সরকার। আর কোনো কূটনীতিকের অতিরিক্ত নিরাপত্তা সুবিধা নিতে হলে আনসার সদস্যদের নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে সামান্য ফি দিতে হবে।
যে কারণে দেওয়া হয়েছিল বাড়তি নিরাপত্তা
২০১৬ সালে ঢাকায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে ঢাকার কয়েকজন কূটনীতিককে বাড়তি নিরাপত্তা সুবিধা দেয় সরকার। তবে সরকারের যুক্তি হচ্ছে, এখন বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা অনেক ভালো। জঙ্গি আক্রমণের ঝুঁকিও নেই। এছাড়া কয়েকজন রাষ্ট্রদূতকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ায়, আরো অনেক দেশের রাষ্ট্রদূতও একই ধরনের সুবিধা চাইছেন। তবে সবাইকেই বাড়তি সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। সে কারণে এই বাড়তি সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সৌদি আরবসহ ছয় দেশের রাষ্ট্রদূত বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। এখন থেকে তারা এটা পাবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
টিআর/এসআইএস