ঢাকা: প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্মরণে ‘কিংবদন্তি আবুল মাল আবদুল মুহিত’ স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা আরপি বাংলা কমিউনিকেশন।
বাংলাদেশ বিচিত্রার সম্পাদক আলাউদ্দিন আল আজাদের সম্পাদনায় প্রায় সাড়ে ৪০০ পৃষ্ঠার এই স্মারকগ্রন্থটিতে আবুল মাল আবদুল মুহিতের বর্ণাঢ্য জীবনের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত তুলে ধরেছেন তার পেশাগত ও রাজনৈতিক সহকর্মীসহ বন্ধু, সুহৃদ এবং পরিবারের সদস্যরা।
শুক্রবার (১৯ মে) বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এই স্মারকগ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী।
অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে মোড়ক উন্মোচন ও স্মরণসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
আবদুল মুহিতের পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক গতি পেয়েছে বাংলাদেশ
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, যারা জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি সারাজীবন দেশের জন্য কাজ করে গেছেন। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল করতে বড় ভূমিকা পালন করেছেন। ক্ষুদ্র ও নারী উদ্যোক্তাদের সামনে এগিয়ে নিতে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দিয়েছিলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই বইটিতে তার ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন দিক প্রকাশ পেয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের লেখার মধ্য দিয়ে তার সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক ছিল, সেগুলোই ফুটে উঠেছে। আমরা এই মানুষটিকে বিভিন্ন আঙ্গিক থেকে জানার ও বোঝার সুযোগ পাচ্ছি। যারা তার ব্যক্তিগত সান্নিধ্যে আসতে পারেনি অর্থাৎ নতুন প্রজন্ম তারাও এই বইটি পড়ে তাকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আমলা হিসেবে তার বৈশিষ্ট্যগুলো জানতে পারবে। সেই কারণেই এই বইটি অমূল্য ও বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার।
আবদুল মুহিতই বাংলাদেশের রূপরেখার পরিকল্পনা করেছিলেন
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের জন্য কী কী করতে হবে, ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তারই পরিকল্পনা করেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে তৎকালীন সময় আবুল মাল আবদুল মুহিত এই কাজ করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নমিনেশন পেয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হওয়ার পর মুহিত ভাইয়ের জীবনের মোড়টা ঘুরে যায়।
তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল, এই আট বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আবুল মাল আব্দুল মুহিত এটা ঠিক করেন যে, যদি কোনো দিন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী হবে! কী কী উপায়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা হবে, সেগুলো চিন্তা করেন। এই সময়টা তার জীবনের একটা অন্যতম সময়। পরবর্তীতে তিনি যখন মন্ত্রী হন, তখন তিনি তার চিন্তাভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপায়িত করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ডাবল করতে কাজ করেছেন। তিনি এটা বলতেন যে, তাদের বেতন বাড়ালে তারা আরও ভালো কাজ করবে, দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এভাবেই তিনি দেশের কথা ভাবতেন। শেষের দিকে এসে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কোনো অতৃপ্তি বা আকাঙ্ক্ষা আছে কি না। তিনি বলেছিলেন, আমার কোনো অতৃপ্তি বা আকাঙ্ক্ষা নাই আর। আমি একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে পেরেছি, সেটি তৈরিতে কাজ করতে পেরেছি, এটিই আমার বড় পাওয়া।
সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত ছিলেন পরিবেশ আন্দোলনের পথপ্রদর্শক
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদ, বিশিষ্ট কূটনীতিবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ছিলেন বাংলাদেশে পরিবেশ আন্দোলনের একজন পথপ্রদর্শক। এছাড়া তিনি বাপা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। এর আগে তিনি 'পরশ' নামে একটি পরিবেশবাদী গ্রুপেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তার মতো সবাই পরিবেশ সচেতন হলে দেশের সার্বিক পরিবেশের উন্নয়ন হবে। তিনি ক্রীড়াক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত অসামান্য প্রতিভাবান মুহিত সাহেব ছিলেন দেশের একজন সত্যিকারের কিংবদন্তি।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিত উঁচু ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তার কাছে আমি অনেক কিছু শেখার সুযোগ পেয়েছি।
সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সবাইকে সহযোগিতা করেছেন উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, তিনি আমার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছিলেন। তার যে সামাজিক নেটওয়ার্ক ছিল, অনেকেই তার সুবিধা পেয়েছেন।
অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপোস করেননি
আবুল মাল আবদুল মুহিতের বোন ও জাতীয় অধ্যাপক ড. শায়লা খাতুন বলেন, তিনি সব সময় সত্যের সঙ্গে ছিলেন এবং অন্যায়ের সঙ্গে কখনও আপোস করেনি। পলিটিশিয়ানদের সব সময় ক্যাডার বাহিনী থাকে, তার কখনও ক্যাডার বাহিনী ছিল না। আমার পরিবারের কেউও সেগুলো করেনি। আমরা গর্বিত যে আমাদের বাবা-মা আমাদের সেভাবে গড়ে তুলেছেন, বড় করেছেন। আমি বলবো আপনারাও আপনাদের সন্তানকে এভাবে সুন্দর করে গড়ে তুলুন।
বাজেটে কৃষকদের মর্যাদা দিয়েছেন
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বলেন, তিনি বাজেট ঘোষণার আগে আমার সঙ্গে গ্রামে চলে যেতেন। সেখানে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতেন, নোট নিতেন। এরপর তিনি তার বাজেট বক্তৃতায় আর সবার মতো বলতেন, এই বাজেট তৈরির আগে আমি অমুক জেলার ২০০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের মতামত নিয়েছি। এর মধ্য দিয়ে তিনি কৃষকদের মর্যাদা দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী, আবুল মাল আবদুল মুহিতের বন্ধু, সুহৃদ এবং তার পেশাগত ও রাজনৈতিক সহকর্মী এবং পরিবারের সদস্যরা। স্মৃতিচারণে বক্তারা প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতের জীবনের নানা কীর্তি ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের নানা দিকের কৃতিত্ব তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২৩
এইচএমএস/এসআইএ