ঢাকা, রবিবার, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা

সাইবার ঝুঁকি কমাতে চাই সচেতনতা-কার্যকরী পদক্ষেপ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
সাইবার ঝুঁকি কমাতে চাই সচেতনতা-কার্যকরী পদক্ষেপ

ঢাকা: দিন দিন সাইবার জগতে মানুষের পদচারণা বাড়ছে। সাইবার স্পেস ব্যবহারে মানুষ যেমন উপকৃত হচ্ছে, ঠিক তেমন অনেকে হয়রানি ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার স্পেসের সঠিক ব্যবহার ও অপরাধীদের ফাঁদ থেকে নিরাপদে থাকতে প্রয়োজন সচেতনতা।  

শনিবার (২০ মে) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা ২০২৩' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।  

গবেষণাটি হয়েছে সাইবার স্পেসে ভুক্তভোগীদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে। গবেষণাটি প্রকাশ করেছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।

বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ বলেন, করোনার আগে সাইবার জগতে মানুষের সম্পৃক্ততা যত ছিল, সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত তার দ্বিগুণ বেড়েছে। এর নানা কারণ রয়েছে। একজন ব্যক্তি কোনো একটি কাজ করতে গেলে সেটা যদি অফলাইনে করতে হয়, তখন তাকে সরাসরি যেতে হয়, লোক খুঁজতে হয়। আবার সেটা হারিয়ে যায় কি না বা কোনো সমস্যা হয় কি না বা কাজটা যথাযথ হবে কি না, তা ভাবতে হয়। আর অনলাইনে করলে কোথাও যেতে হয় না। আবার একটি ডকুমেন্টও রাখা যাচ্ছে। ।  

তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব সাইবার জগতে নিজের শক্তিমত্তা দেখানোর চেষ্টা করছে। এমনকি সাইবার বিষয় নিয়ে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধও প্রভাবিত হয়েছে। তাই সাইবার জগত এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা বলেন, সাইবার জগতে মানুষের প্রবেশ দিনকে দিন বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে। সাথে বাড়বে ঝুঁকিও। সবাই কোনো না কোনোভাবে সাইবার অপরাধের ঝুঁকিতে আছি।

তিনি বলেন, চীনসহ অনেক দেশই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর অনুমতি দেয়। আমাদেরও সে রকম করা উচিত। কিন্তু আমাদের হচ্ছে উল্টো। আমরা আগে অনুমতি দিই, এবং ঝুঁকি কিংবা নিরাপত্তাহীনতায় পড়লে প্রতিরোধ, প্রশিক্ষণের পথ দেখি। অপরাধ ঘটার আগে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, ভুক্তভোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কেন যান না, তা একটি বড় প্রশ্ন। ধর্ষণের বিষয়েই যদি বলি, নানা প্রমাণ একজন নারীকে দিতে হয়। আলামত নষ্ট হয়ে গেলে তা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।  

তিনি বলেন, কমবয়সীদের হাতে এখন যেভাবে মোবাইল পৌঁছে গেছে তাদের অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাবে। তাই এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে পরিবার থেকেই। আমাদের সন্তানদের সঙ্গে মিশতে হবে। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে এলে যোগাযোগ হচ্ছে। আবার যখনই শেষ হয়ে যায়, আর যোগাযোগ নেই। এই বিচ্ছিন্নতার কারণে আত্মহত্যাও হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন। অথচ তাদের একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ ছিল। কিন্তু তারা বিচ্ছিন্ন, একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতায় ভুগেই আত্মহত্যা করেছেন।

সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, নিজেদের তৈরি নয়, এমন অজানা জায়গা থেকে আসা প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করি। তাছাড়া সাইবার দুনিয়াটা পুরোটাই ধোঁয়াশায় পূর্ণ। এরমধ্যে এসেছে চ্যাটজিপির বিষয়টি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) গবেষণা কর্মকর্তা নাহিয়ান রেজা সাবরিয়েত বলেন, গবেষণার মাধ্যমেই সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার হয়। সংখ্যাভিত্তিক গবেষণা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমাদৃত।

সিক্যাফ এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হলেও বিগত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে কমছে সাইবার বুলিং সংশ্লিষ্ট অপরাধের ঘটনা (অনলাইন ও ফোনে বার্তা পাঠানো, পর্নোগ্রাফি, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার ও ছবি বিকৃতি)। এ ধরনের অপরাধ ২০২২ সালে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।

সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য আইডি হ্যাকিংয়ের ঘটনাগুলোও ধারাবাহিকভাবে কমলেও আর্থিক সংশ্লিষ্ট প্রতারণা থেমে নেই। ২০২২ সালে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অপরদিকে, ভুক্তভোগীদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশই নারী। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে অভিযোগের হার দিন দিন কমছে।  

২০১৮ থেকে পাঁচটি জরিপে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের মাঝে কতজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন, তার ফলাফল উদ্বেগজনক। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভুক্তভোগীদের মধ্যে অভিযোগকারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালের জরিপে যেখানে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ, ২০২৩ এ গিয়ে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে।  

এ ছাড়া ২০২৩ সালের জরিপে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি (২ শতাংশের বেশি) অপপ্রচারের শিকার হয় শিশুরা। বয়সভিত্তিক অপরাধের ধরনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১২ শতাংশ তরুণ (১৮-৩০ বছর) একই ধরনের অপরাধের শিকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ জরিপে ভুক্তভোগীদের ৭৫ শতাংশের বয়সই ছিল ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ২০১৮ সালের জরিপ থেকে এ পর্যন্ত একাধারে এই বয়সী ভুক্তভোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচার ও আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৩
এসজেএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।