রাজশাহী: রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গায় জেলা পরিষদের মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বুধবার (২৪ মে) সকাল ১০টা থেকে সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ—এদেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস ও স্মৃতিতে সমৃদ্ধ শিক্ষানগরী রাজশাহী। অথচ ঐতিহ্য বহনকারী এমন একটি শহরে শহীদদের স্মরণে কোনো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নেই। ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষ ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। এর প্রেক্ষিতে নগরীর সোনাদীঘি সংলগ্ন পুরাতন সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি ভাষাসৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু। ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন অনুষ্ঠানে ছিলেন তৎকালীন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাসহ রাজশাহীর সর্বস্তরের মানুষ। সেই আন্দোলন ও ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল নিজেও ছিলেন। অথচ রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মীর ইকবাল সব ভুলে গেছেন!
বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। সেখানে মার্কেট নির্মাণের অপচেষ্টা করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রাজশাহী জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ইয়াসিন আলী বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার যেখানে হওয়ার কথা সেখানেই হবে। কেউ বাধা দিতে পারবে না। বাধা দিলে প্রতিহত করা হবে।
কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান বলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লোভের কারণে শহীদ মিনারের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করতে চাচ্ছেন। তিনি কার স্বার্থে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মার্কেট নির্মাণ করতে চাচ্ছেন, সেটি আমরা জানতে চাই।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার ক্ষমতা নেই শহীদ মিনারের স্থানে মার্কেট নির্মাণ করার। আমরা সেখানে শহীদ মিনার করেই দেখাবো ইনশাআল্লাহ।
রাজশাহী মহানগর ইউনিট কমান্ডের কার্যকরী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপিকা জিনাতুন নেসা তালুকদার বলেন, যেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে জেনে বুঝে কীভাবে মার্কেট বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের বুঝে আসে না। ১৯৪৮ থেকে ৫২ ভাষা শহীদ, ১৯৭১ সালের ৩০ লাখ শহীদের আত্মা বড় কষ্ট পাচ্ছে আপনার বর্তমান কর্মকাণ্ডের জন্য। এটি হতে দেওয়া যাবে না।
মানববন্ধনে সেক্টর কমার্ন্ডাস ফোরামের বিভাগীয় সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন খন্দকার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক মহানগর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের কামরুল ইসলাম মিঠু, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযোদ্ধা একাত্তর রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক শাবান আলী দিলীপসহ রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মসূচি পরিচালনা করেন সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৩
এসএস/এমজেএফ