বরিশাল: নির্বাচন আসে যায় কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। নেই কোনো সাপ্লাইয়ের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, সেইসঙ্গে বাড়ির সামনের ভাঙ্গাচোরা সড়কটি দিয়ে চলতে হচ্ছে বছরের পর বছর।
অটোরিকশাচালক শাহিন জানান, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের রুপাতলী থেকে দপদপিয়া ফেরিঘাট, গ্যা সটারবাইন, সামিট পাওয়ার, আদর্শ সড়কগুলোর অবস্থা এতই খারাপ যে গাড়ি চালিয়ে আয় করার থেকে মেরামতে ব্যয় বেশি হয়ে যাচ্ছে।
তবে শুধু যে এই ওয়ার্ডের ভাঙ্গাচোরা সড়কে বাসিন্দারা নাজেহাল এমনটা নয়, শহরের বর্ধিত এলাকা হিসেবে খ্যাত নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বেশিরভাগ রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। আবার শহরের মধ্যে ২০, ২১, ২২ নম্বরসহ বেশিকিছু ওয়ার্ডেও রয়েছে ভাঙ্গা সড়ক। একটু বৃষ্টি হলেই সেসব ভাঙ্গা সড়কের খানাখন্দে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, সেইসঙ্গে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সহসাই নামছেনা সড়ক ও বাড়ির আঙ্গিনায় জমে থাকা পানিও।
নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিরাজ বলেন, এই আমলে উন্নয়ন কালিজিরা বাজার হইতে একটা রাস্তা করছে, কিন্তু অলি-গলির রাস্তাগুলো তো সব ভাঙ্গা। হ্যার ওপর মোগো এলাকার বেশির ভাগ জায়গায় সাপ্লাইর পানি নাই, যদি চাপকল বওয়াইতে চাই হেলে সিটি করপোরেশনরেই তো কতগুলা টাহা দিতে হবে। হ্যার চাইয়া মানুষের বাড়ি থেকে খাওনের লইগ্যা পানি আনি। আর গোসলসহ বাকি কাম হারি খাল ও পুকুরের পানি দিয়া। কিন্তু এখন আমরা চাই সড়কসহ সকলকিছুর সমন্বিত উন্নয়ন।
অপরদিকে, নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিন্টু বলেন, ভোট দিয়ে লাভ কি? কাউন্সিলর-মেয়র কেউই তো গত ১০ বছরে আমাদের ওয়ার্ডের জনগুরুত্বপূর্ণ দরগাহ বাড়ি থেকে টিয়াখালী সড়কটিরই উন্নয়ন করতে পারেনি, বাকিগুলোর হিসেব আলাদা।
আর এসকল ভোগান্তির কারণে বিগত সময়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি বিরুপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে ভোটারদের। এজন্যই কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পরিষদের বর্তমান কাউন্সিলরবৃন্দর নির্বাচনে চূড়ান্ত বিজয় নিয়ে।
নগরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আনিছুর রহমান পুনরায় এবারের সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে নির্বাচন অংশগ্রহণ করেছি। আমরা ৫ বছর পিছিয়েছি শওকত হোসেন হিরনকে মেয়র না বানাতে পেরে, আর ৫ বছর পিছিয়েছি সাদিক আব্দুল্লাহকে মেয়র বানিয়ে। প্লানের আবেদন করে ৬ মাসেও তা পায়নি, চাপকল বসাতে টাকা দেওয়া লাগতো, এরকম নানান সমস্যার কারণে নগরবাসী অতিষ্ট ছিল। তবে এবার দল (আওয়ামী লীগ) যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তিনি নির্বাচনে জয়ী হলে বরিশালের উন্নয়ন হবে এটা নিশ্চিত। তাই ভোটাররা বরিশাল ও নিজের এলাকার উন্নয়নে নৌকার সঙ্গে আমাকেও ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।
নগরের বর্ধিত এলাকা খ্যাত ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিটি নির্বাচেনর প্রার্থী হুমায়ুন কবির বলেন, এখন সাধারণ মানুষ সবকিছু বোঝে। শওকত হোসেন হিরনের পর কেন কি কারণে, গত দুই মেয়রের আমলের এলাকার উন্নয়ন করতে পারিনি তা তারাও জানে। তবে আমরাও তো জননেত্রী শেখ হাসিনার সৈনিক। তাই আমার সাধ্যমতো আমি মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। কাগজে-কলমের মানুষের যেমন উপকার করছি, তেমনি যে কোনো বিপদে-আপদে ওয়ার্ডবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আর মেয়রের কাছ থেকে সরে এসেও সদর আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে এলাকার মানুষকে সাহায্য-সহযোগীতাও দিয়েছি। ভোটাররা এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েই আমাকে নির্বাচনে দাড়ানোর সাহস দিয়েছে। তাদের কারণে আমি প্রার্থী আর জয়ীও হবো আশাকরছি।
জয়ী হওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, নিজের ওয়ার্ডে খাদ্য সহায়তার কার্ডও নিজে দিতে পারিনি এটাও মানতে হয়েছে। বর্তমান মেয়রের লোকজন তাদের কাছের লোকজনরে দিছে, তারা কিভাবে বুঝবে কার ওই কার্ডটা প্রয়োজন বেশি ছিল। রাস্তাঘাটের কথা আর কি বলবো, প্রতিবাদ করতে গেলে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দিয়ে আমাকে হেনস্থা করার চেষ্টা করেছে একাধিকবার। আমার ওয়ার্ডের প্রতিটি সাধারণ মানুষ সবকিছু জানে, তারা আমার সঙ্গে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
আর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও সিটি নির্বাচনের প্রার্থী এনামুল হক বাহার বলেন, মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ আমাদের কথা শোনেননি, কোনো কাজও করতে দেননি। গত ৪ বছরে তিনি তার লোক দিয়ে এককভাবে যেখানে যা মনে হয়েছে তাই করেছেন। আমাদের কিছু করার সুযোগ ছিলনা। তাই বাধ্য হয়ে আমরা বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর তার কাছে যাওয়া বন্ধ করে দেই। তবে উন্নয়ন কাজ করতে না পারলেও নিজের সাধ্য ও সামর্থ্য মতো ওয়ার্ডবাসীর পাশে বিপদে-আপদে থাকার চেষ্টা করেছি।
তবে টানা প্রায় দুইমাস ধরে বরিশালে না থাকায় এসব বিষয়ে মেয়রের বক্তব্য পাওয়া যায়নি, আর উন্নয়ন হওয়া না হওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি নগর ভবন কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৩
এমএস/ এসএম