মাদারীপুর: মাদারীপুরে যৌতুকের দাবি করা ৫ লাখ টাকা দিতে না পারায় ৮ মাসের সন্তান রেখে স্ত্রীকে তাড়িয়ে দেওয়া স্বামী কাওসার আহমেদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুরে কাওসার আহমেদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন।
জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার ভ্যানচালক ফেরদাউস বেপারীর মেয়ে নাজমিনের সঙ্গে দুই বছর আগে ডাসার উপজেলার দক্ষিণ ভাউতলী গ্রামের ইদ্রিস মুন্সীর ছেলে কাওসার আহম্মেদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন ভালো কাটলেও তারপর থেকে নানাভাবে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন নাজমিনের পরিবারকে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ভ্যানচালক ফেরদাউস ব্যাপারী ৩ লাখ টাকা মেয়ে জামাই কাওসারের হাতে তুলে দেন। কিছুদিন পর তাদের সংসারে এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
গত ১৪ মার্চ (মঙ্গলবার) আবারও নাজমিনের পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন কাওসার। পরিবার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শিশু সন্তান আলিশবাকে রেখে নাজমিনকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন কাওসার। এরপর থেকে স্বামী কাওসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি নাজমিন ও তার পরিবার। পরে উপায় না দেখে সন্তানকে ফেরত পেতে আদালতের দারস্থ হন নাজমিন। এদিকে ঘটনার ৩ মাস হয়ে গেলেও নাজমিন জানে না তার সন্তান কেমন এবং কোথায় আছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত কাওসার আহমেদ নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে জামিন নেওয়ার জন্য গেলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলার আসামি পেশায় ঢাকা জজ কোর্টের একজন আইনজীবী।
নাজমিন আক্তার বলেন, 'বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য মারধর করতো। আমি সহ্য করে ছিলাম। ভেবেছি সন্তান হলে সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এরপরও আমার স্বামী যৌতুকের জন্য মারধর করতে থাকে। সন্তানটার জন্য অনেক কষ্ট করে মুখ বুজে সহ্য করছিলাম। কিন্তু টাকার জন্য সে আমার দুধের বাচ্চাটারে রেখে আমাকে তাড়িয়ে দিল। আমি আমার বাচ্চাটাকে ফেরত চাইলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আজ ঘটনার তিন মাস হয়ে গেছে কিন্তু আমার বাচ্চার কোনো খোঁজ নাই। আমি আমার বাচ্চাটারে ফেরত চাই। এবং আমাকে না জানিয়ে সে আরও একটা বিয়ে করছে। আমি তার শাস্তি চাই। '
মামলার বাদীর ছোট বোন অন্তরা জানান, 'আমরা ছোট্ট শিশু বাচ্চাকে ফেরত চাই ও মামলার আসামির অপরাধের শাস্তি চাই। '
মামলার প্রধান আইনজীবী ও মাদারীপুর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. গোলাম কিবরিয়া হাওলাদার বলেন, এখন থেকে প্রায় আড়াই মাস আগে ৮ মাসের শিশু বাচ্চাকে রেখে তার মাকে তাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে বাচ্চা কোথায় আছে, কেমন আছে? এর কোনো সদুত্তরও আসামি দিতে পারেনি। এছাড়া এ বিষয় বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। আজ বিচারক ওই মামলার আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ' আমি এই মামলার একজন আইনজীবী হিসেবে বলবো আসামি যেটা করেছে সেটা অন্যায়।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোসলেম আলী আকন জানান, ওই আসামি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে কিন্তু কোনো নোটিশ আসেনি তার স্ত্রীর কাছে এবং সবচেয়ে বড় অপরাধ করেছে ৮ মাসের শিশুকে সে রেখে দিয়েছে। আইনে আছে ১৮ বছর (প্রাপ্ত বয়স্ক) না হওয়া পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে তার সন্তান। আর এই অপরাধে আজ আসামিকে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। '
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২৩
আরএ