বরিশাল: বছরের পর বছর ধরে বরিশাল নগরের সব বর্জ্য নিয়ে ফেলা হচ্ছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পুরানপাড়ার ময়লাখোলা এলাকায়। তবে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে ময়লাখোলায় নিয়ে জড়ো করা বরিশাল নগরের সব বর্জ্য এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় বাসিন্দা অলিউল ইসলাম বলেন, বাতাস বইতে থাকলে আশপাশের এলাকার মানুষ ময়লাখোলার দুর্গন্ধে টিকতে পারে না। অনেকে তো বাড়িঘর রেখে অন্যত্র গিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, আবার যাদের পক্ষে সম্ভব না তারা খুব কষ্টে এই এলাকায় জীবনযাপন করছেন।
তিনি বলেন, বহু বছর ধরে শুনে আসছি ময়লাখোলা সরিয়ে শহরের বাইরে নেওয়া হবে। অনেকে তো আশ্বাস দিয়েছেন ময়লাখোলা স্থানান্তর হলে এখানে আধুনিক শপিংমল হবে কিন্তু নির্বাচন আসে যায়, জনপ্রতিনিধির পরিবর্তন ঘটলেও ময়লাখোলার কোনো পরিবর্তন নেই। আবার শুনছি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আসেব ময়লাখোলা।
প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, এ ময়লাখোলার উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানকার শিক্ষার্থীরাও ভালো নেই। ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। কর্তৃপক্ষকে এলাকাবাসী একাধিকবার ময়লাখোলার দুর্গন্ধের বিষয় অবগত করলেও কোনো লাভ হয়নি। বরং ময়লাখোলা এলাকায় শূকর পালনের একটি প্রজেক্ট করা হয়েছে। শূকরের একটি দলে ১৫৮টি শূকর এখনো আছে। এছাড়া অসংখ্য কুকুর থাকে ওই এলাকায়। যেগুলোর কামড়ের ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতেও ভয় পায়।
এদিকে শুষ্ক মৌসুমে ময়লাখোলার ময়লায় আগুন দিলে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা শাহরিয়ার বলেন, সিটি করপোরেশনের লোকজন যখন ময়লায় আগুন দেয়, তখন ধোঁয়া আর অদ্ভূদ এক গন্ধে চারপাশের বাসিন্দারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।
ছানোয়ার নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, শীতকালীন আবহাওয়ায় ময়লাখোলায় ভ্যাবসা গন্ধ তৈরি হয়। তখন আশপাশের ২-৩ কিলোমিটারে বসবাস করা কষ্টকর হয়ে যায়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ময়লাখোলায় নেশাগ্রস্তদের আড্ডা বেশি জানিয়ে হাসান নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, যেই নগরভবনে ও আমাদের ওয়ার্ডের দায়িত্বে আসুক, তাকেই ময়লাখোলাটাকে হয় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া, নয়তো আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন করার দাবি জানাই। কিন্তু সবাই মুখে আশ্বাস দিলেও উদ্যোগ নেয় না।
তিনি বলেন, ময়লাখোলার আশপাশের বেশকিছু মানুষ বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। এখানে গাছে ঠিকভাবে ফলও ধরে না। গাছের পাতাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়। সব চেয়ে বড় কথা হলো কেউ আমাদের এখানে বেড়াতে আসতে চায় না।
ময়লাখোলার কারণে ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপুরানপাড়া ও কাউনিয়া থানার সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ বলেন, আমরা চাই এবারের নির্বাচনে যে বিজয়ী হবেন, তিনি যেন সবার আগে এ ময়লাখোলার বিষয়ে উদ্যোগ নেন। হয় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটিকে গড়া হোক, নয়তো সরিয়ে নেওয়া হোক।
তিনি বলেন, যারা ময়লাখোলা এলাকার আশপাশে থাকেন তারা জনপ্রতিনিধি বানাতে কষ্ট করে ভোটও দিতে চায় না। তবে প্রত্যাশা থাকবে যিনি বিজয়ী হবেন তিনি বিষয়টি সবার আগে যেন গুরুত্ব দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২৩
এমএস/আরআইএস