নেত্রকোণা: দুর্গাপুর উপজেলার ৩ নম্বর চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের দুই নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. সিরাজুল ইসলাম তোতা মিয়া। ক্ষমতার প্রভাবে তিনি ‘দরিদ্রের টাকা মেরে খান’ এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
মেম্বার তোতা মিয়ার বিরুদ্ধে বয়স্ক-প্রতিবন্ধী-বিধবা-মাতৃত্বকালীনসহ সব ধরনের ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে ‘কমিশন নেওয়ার’ অভিযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে কখনও তিনি অগ্রিম টাকা নেন; আবার কখনও ভাতার টাকার অংশ। অনেককে তিনি ‘ভাতা থেকে টাকা দিতে হবে’ প্রতিশ্রুতি নিয়ে কার্ড করে না। স্থানীয়দের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে মোটা টাকা আত্মসাতের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগে দুর্গাপুর উপজেলার ৩ নম্বর চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের দুই নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. সিরাজুল ইসলাম তোতা মিয়ার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ পত্রে নেওয়া হয়েছে গণস্বাক্ষর।
নিজ ওয়ার্ডে পরপর তিনবার মেম্বার নির্বাচন করেন তোতা মিয়া। কিন্তু দুবারই হারের মুখ দেখেন। তৃতীয়বার মেম্বার হয়েই লোকজনের টাকা মেরে খেতে শুরু করেন তিনি। এমন অভিযোগ গ্রামবাসীর। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তার কারণে সাধারণ জনগণ অতিষ্ঠ।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, মেম্বার তোতা মিয়া সরকারি বিভিন্ন ভাতা কার্ড করে দিতে জনগণের কাছ থেকে টাকা নেন। চাহিদা অনুযায়ী তাকে অর্থ দিতে না পারলে ভাতা পাওয়ার উপযোগী ব্যক্তিরা কার্ড পান না। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে ঘুষ নিয়ে অন্যদের তিনি কার্ড দেন। এতে করে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, মেলাডহর গ্রামের ডালিয়া বেগম, পারভীন আক্তার, ফাতেমা খাতুন, রাবিয়া খাতুনসহ বহু নারীর কাছ থেকে তোতা মিয়া ভাতা (চাল-বয়স্ক ভাতা) কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়েছেন। ১ হাজার টাকা করে নিয়েছেন ব্যক্তি প্রতি। গভীর নলকূপ (সাবমার্সেবল) পাইয়ে নেওয়ার নাম করেও বিভিন্নজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন তোতা মিয়া।
মেলাডহর গ্রামের এক অন্তঃসত্ত্বা তোতা মিয়ার কাছে গিয়েছিলেন গর্ভবতী ভাতা কার্ড করতে। তোতা তার কাছে অর্থ দাবি করেন। ওই নারী তাকে আড়াই হাজার টাকাও দেন, কিন্তু এখনও কার্ড পাননি।
ফাতেমা খাতুন নামে এক নারী জানান, তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তার বয়স্ক ভাতা কার্ড করাতে তিনি মেম্বার তোতা মিয়ার কাছে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি অর্থ দাবি করেন। টাকা দিয়ে হলেও যদি কার্ড পান- সে আশায় তিনি ‘সুদী ঋণ’ করে তোতা মিয়াকে ১ হাজার টাকা দেন। পরে আবার ২০০ টাকা দেন ফাতেমা। এরপরও তার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়েছিলেন তোতা। কিন্তু বছর পার হলেও তিনি ফাতেমাকে কার্ড দেননি।
চালের কার্ড করতে মেম্বারের কাছে গিয়েছিলেন ধানসিরা গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম। তোতা তার কাছে অগ্রিম ৪ হাজার টাকা চান। বিলকিস তাকে ১৫০০ টাকা দেন। কিন্তু তিনি এ টাকা নেননি। তার চার হাজার টাকাই লাগবে। টাকা না দিতে পারায় বিলকিসের কার্ডটিও করে দেননি।
তোতার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাগজে মেম্বার হিসেবে সই করতেও অর্থ আদায় করেন তিনি। টাকা না দিলে তিনি সুবিধাভোগীকে ঘোরান। তা ছাড়া টিউবওয়েল স্থাপনেও তোতা টাকা নেন।
আবুল কাশেম নামে এক স্থানীয় জানান, মেম্বার সাবমার্সেবল এনে দেবেন বলে তার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নেন। এক মাস আগে তিনি টাকা নিলেও এখনও টিউবওয়েল দেননি।
অভিযোগের প্রসঙ্গে ইউপি সদস্য (মেম্বার) তোতা মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি সব কিছুই অস্বীকার করেন। তোতা বলেন, আমার বিষয়ে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমি কারও কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিই না।
বিষয়টি নিয়ে ৩ নম্বর চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক (আলম) সরকারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পরিষদের প্রতিটি মিটিং মেম্বারদের এসব বিষয়ে সতর্ক করা হয়। ইউপি সদস্য তোতা মিয়ার ব্যাপারে আমার কাছে এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ইউএনও মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৩
এমজে