বগুড়া: ঈদুল আজহা আসন্ন। এ ঈদকে সামনে রেখে বগুড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যক্তি পর্যায়ে ও খামারিরা গবাদিপশু পালন করে থাকেন।
জেলার ১২টি উপজেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার খামারিসহ ব্যক্তি পর্যায়ে বাসাবাড়িতে এসব পশু পালন করা হচ্ছে। খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কোরবানিযোগ্য করে তোলা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ২৬ হাজার ৬০০টি গবাদিপশু।
সোমবার (৫ জুন) জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
বগুড়ায় ইতোমধ্যেই এসব পশু বিক্রির জন্য জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে তোলা হচ্ছে। দাম দরে মিলে গেলে বিক্রিও করা হচ্ছে। জেলার বাইরের ব্যাপারিরাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার বাইরের জেলার পশুও এ জেলার ব্যাপারিরা কিনে আনছেন। সব মিলিয়ে এ জেলায় কোরবানির পশুর কোনো সঙ্কট পড়বে না। দেশীয় পশুতেই কোরবানি সম্পন্ন করতে পারবেন বগুড়াবাসী এমনটা দাবি সংশ্লিষ্টদের।
তবে গো-খাদ্যের অতিরিক্ত দামের কারণে প্রস্তুতকৃত পশুর প্রত্যাশিত দাম নিয়ে শঙ্কায় আছেন খামারিরা। এদিকে কোরবানির পশুর দাম অতিরিক্ত বেড়ে গেলে সংকটে পড়বেন মধ্যবিত্ত কোরবানিদাতারা। সব মিলে চলতি বছরে কোরবানির পশু প্রস্তুতকারী ও কোরবানি দিতে আগ্রহীরা কেউ নেই স্বস্তিতে।
এদিকে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার রোধে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খামারি ও পশু পালনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র। পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জেলার মোট ১২টি উপজেলার ৪৪ হাজার ৩২৯ জন খামারি মোট ৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৭টি গবাদিপশু কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন। গত বছর কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫টি। গেল বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৩০২টি। এ বছর জেলায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৪ হাজার ৪৬০টি। গত বছর পশুর চাহিদা ছিল ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৫টি। গত বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা বেড়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮৫টি। চাহিদার অতিরিক্ত পশু রয়েছে ২২ হাজার ১৩৭টি।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় (৩২৮৫ জন খামারি) ৭১ হাজার ৭০৩টি, গাবতলীতে (৩০৪৯ জন খামারি) ৬৫ হাজার ২৮টি, সারিয়াকান্দিতে (৫০০৩ জন খামারি) ৬৫ হাজার ৮০৬টি, সোনাতলায় (৩৮৭৭ জন খামারি) ৫৬ হাজার ৪১৯টি, শিবগঞ্জে (১১৪১ জন খামারি) ৬৩ হাজার ৫৫৩টি, কাহালুতে (২৬৪৯ জন খামারি) ৬১ হাজার ৮৮০টি, দুপচাঁচিয়ায় (৫৬৩০ জন খামারি) ৫৯ হাজার ৯৮৫টি, আদমদীঘিতে (২৪৫৩ জন খামারি) ৪৭ হাজার ৬৩৮টি, নন্দীগ্রামে (২২৫১ জন খামারি) ৪৯ হাজার ১৭১টি, শেরপুরে (৬০৩৭ জন খামারি) ৭০ হাজার ১৬২টি, ধুনটে (৩৯৯৭ জন খামারি) ৬২ হাজার ১৩২টি ও শাজাহানপুর উপজেলায় (৪৯৫৭ জন খামারি) ৫৩ হাজার ১২০টি গবাদিপশু রয়েছে।
এ পশুগুলোর মধ্যে গরু ষাঁড় রয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯০টি, বলদ ৪১ হাজার ৮৬টি, গাভি ৫০ হাজার ৪৫১টি, মহিষ ২ হাজার ৬৬০টি, ছাগল ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৬১৫টি ও ভেড়া রয়েছে ৩১ হাজার ৪৭৩টি।
জানা যায়, এ জেলায় স্থায়ী হাট রয়েছে ৪৫টির মতো। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে স্থায়ী হাটসহ প্রায় ৫৫ থেকে ৭০টির মতো পশুর হাট বসে। এসব হাটে কোরবানিযোগ্য পশুগুলো বিক্রির জন্য তোলা হবে। ইতোমধ্যেই স্থায়ীসহ অস্থায়ী হাটে বিক্রি শুরু করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোছা. নাছরীন পারভীন বাংলানিউজকে জানান, গেল বছরের তুলনায় বগুড়ায় এবার চাহিদার সঙ্গে প্রস্তুতকৃত পশুর সংখ্যাও বেড়েছে। এ বছর জেলায় যে পরিমাণ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে তার থেকে প্রস্তুতকৃত কোরবানির পশুর উদ্বৃত্ত রয়েছে ২২ হাজার ১৩৭টি। অন্য সময়ের তুলনায় বগুড়ায় পশু প্রতিপালনের হার বেড়েছে। এ বছর জেলায় যে পরিমাণ কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে তার থেকে বেশি পশু প্রস্তুত থাকায় কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. সাজেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বগুড়ায় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ যেন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার না করেন সেজন্য ইতোপূর্বেই প্রচারণা চালানো হয়েছে। জেলার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাবে। আবার বিভিন্ন জেলার পশুও এ জেলায় আসবে। তাই ঈদে কোরবানির পশুর কোনো সঙ্কট হবে না বরং চাহিদার অতিরিক্ত রয়েছে।
পুরোদমে হাট শুরু হলে সেসব স্থানে মেডিকেল টিম বসানো হবে। জেলা কার্যালয়ের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে স্ব স্ব প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এ কাজের দেখভাল করবেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
কেইউএ/আরবি