নাটোর: নাটোরের সোনাপাতিল-নলডাঙ্গা মহিলা কলেজে গত ১৮ বছরেও আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব ও অডিট হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ে ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের নামে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উঠেছে কলেজ গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি আরাফ মাহতাব প্লাবনের বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় সভাপতির আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত জ্যৈষ্ঠ প্রভাষক (ভূগোল) আব্দুস সালাম সম্প্রতি কলেজের হিসাবরক্ষক কাম অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম আজাদকে মারধর করেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো সুরাহ হয়নি। এসব ঘটনাকে ঘিরে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী।
বুধবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কলেজ চত্বর এলাকার সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানার নিয়ে এলাকাবাসী ওই হামলাকারী শিক্ষক আব্দুস সালামের বিচার ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির অপসারণসহ নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম হাদু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী, দপ্তর সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, নলডাঙ্গা পৌরসভার কাউন্সিলর মাহবুর রহমান, কাউন্সিলর মাহামুদুল হাসান মুক্তা, মহিলা কাউন্সিলর শামসুন নাহার, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মিলন, আওয়ামী লীগ নেতা আকতার হোসেন, কলেজের হিসাব রক্ষক কামরুল ইসলাম আজাদসহ আরও অনেকে।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য রত্না আহম্মেদের ব্যক্তিগত সহকারী আরাফ মাহতাব প্লাবন ওই কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার পর থেকে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ ও ডিগ্রি খোলার নামে ১৬ জনের কাছে থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পাশাপাশি সাবেক অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম দুর্নীতি ধামাচাপা দিকে তৎপর ছিলেন কলেজের সভাপতি।
আর এই অনিয়ম দুর্নীতিতে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করছেন নওগা-নাটোর আসনের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য রত্না আহম্মেদ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় আব্দুস সালাম নামে এক শিক্ষক কলেজের হিসাবরক্ষক কাম অফিস সহকারী কামরুল ইসলাম আজাদকে বেদম মারধর করা হয়।
সেই ঘটনার বিচারের দাবি জানালেও সভাপতি তার বিচার না করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বক্তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, আরাফ মাহতাব প্লাবনের মতো অযোগ্য সভাপতি দায়িত্বে থাকলে কলেজ ধ্বংস হয়ে যাবে। শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যাবে। তিনি ওই কলেজে টাকার বিনিময়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। ডিগ্রি খোলাসহ আরও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।
তাকে এই কাজে আর সুযোগ দেওয়া হবে না উল্লেখ করে শীঘ্রই কলেজের সভাপতি তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি করেন বক্তারা। অন্যথায় তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন। পরে তারা সোনাপাতিল বাজারে একটি মিছিল বের করে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে সোনাপাতিল-নলডাঙ্গা মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম বাংলানিউজকে জানান, কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রভাষক আব্দুস সালাম ও হিসাবরক্ষক কাম অফিস সহকারী কামরুল ইসলামের সঙ্গে সম্প্রতি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে কলেজের সভাপতিকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন। আর শিক্ষক নিয়োগের অনিয়ম বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। ওইসব নিয়োগ প্রক্রিয়ার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব হাতে পেয়েছেন। এলাকাবাসী একটি মানববন্ধন করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই দেখবেন বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সোনাপাতিল-নলডাঙ্গা মহিলা কলেজের সভাপতি আরাফ মাহতাব প্লাবন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, শিক্ষক নিয়োগে কোনো প্রকার অনিয়ম বা টাকা পয়সা লেনদেন হয়নি। সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ও বৈধ পন্থায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কলেজের হিসাবরক্ষক কামরুলকে মারধরের বিষয়ে পরিচালনা পরিষদ মিলে আলোচনা সাপেক্ষে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় একটি চক্র তাদের অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং মানববন্ধন করেছেন। তাদের অভিযোগের বিন্দু পরিমাণ সত্যতা নেই। আর সংসদ সদস্য রত্না আহমেদকে জড়িয়ে যে-সব বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কলেজ নিয়ে তার কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ নেই। এমনকি কলেজে নিয়োগ বা কোনো বিষয়েও তার সম্পৃক্ততা নেই।
নওগাঁ-নাটোর আসনের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য রত্না আহম্মেদ বাংলানিউজকে জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। ব্যক্তিগতভাবে তার মানসম্মান ক্ষুণ্ন করতে এবং এলাকায় ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে এ ধরনের মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
এফআর