ঢাকা: মো. ইয়াকুব আলী (৪০) রংপুরের পীরগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা। সে টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে প্রথমে রাঙ্গামাটি, পরে অভিনব কৌশলে ট্রাভেলারের বেশে ঢাকায় ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন ইয়াকুব আলী।
বুধবার (১২ জুলাই) রাত থেকে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) পর্যন্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চা বিক্রেতার ছদ্মবেশে থেকে পৃথক ৩টি অভিযান পরিচালনা করে ৪১ হাজার ইয়াবাসহ চক্রের হোতাসহ ৫ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ঢাকা মেট্রো উত্তর উপ-অঞ্চল।
গ্রেপ্তাররা হলেন- সাধন তনচংগ্যা (২৫), ফাতেমা (৩৫), মোছা.মমিনা বেগম (২০), মো.ইয়াকুব আলী (৪০) ও মো. নাঈম (২৪)। জব্দ হওয়া ইয়াবার আনুমানিক বাজারমূল্য ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও ডিএনসির ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ে (উত্তর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসির ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধান মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী এসব তথ্য জানান।
মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, আমরা তথ্য পাই রাজধানীর গাবতলী এলাকায় একটি চক্রের বিপুল পরিমাণ ইয়াবার একটি চালানের লেনদেন করবে। এ তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাধন তনচংগ্যাকে নারীদের পেটিকোটের ভেতরে বিশেষভাবে তৈরি পকেটে ১১ হাজার ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সাধন জানান, টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে প্রথমে রাঙ্গামাটি নিয়ে যায়, সেখান থেকে একটি পরিবহনে গাবতলী এলাকায় অবস্থানরত উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের মাদক কারবারির কাছে সরবরাহ করে। চাঁদপুর থেকে আসা একটি ইয়াবা চালানের বিষয়ে তিনি বলেন, চক্রটির আরেক দুই সদস্য বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে সদরঘাটে আসে।
ডিএনসির অপর একটি দল অভিযান পরিচালনা করে ফাতেমা ও মমিনা বেগমকে ৪ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তাররা জানান, তাদের দুইজনের বাড়ি টেকনাফে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিয়ে টেকনাফ থেকে প্রথমে ইয়াবার চালান নিয়ে চাঁদপুর অবস্থান করে এবং পরবর্তীতে লঞ্চে করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে তারা বাড়তি সর্তকর্তা হিসেবে লাগেজের ভেতরে বিশেষ কৌশলে চেম্বার করে লুকিয়ে ইয়াবা পরিবহন করে। একই পদ্ধতিতে তারা একাধিক ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে এসেছে।
ট্রাভেলারের ছদ্মবেশে মোটরসাকে ইয়াবা পাচার
মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আসে রংপুর কেন্দ্রীক কুখ্যাত মাদক কারবারি ও একাধিক মাদক মামলার আসামি ইয়াকুব আলী দীর্ঘদিন মিরপুর ও উত্তরবঙ্গের রংপুর অঞ্চলে ইয়াবা সরবরাহ করে আসছে। তার মাদক চোরাচালানের কৌশল একটু ভিন্ন ধরনের। টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে সে সরাসরি নিজেই মাদকদ্রব্য সংগ্রহ ও পরিবহন করে ঢাকায় নিয়ে আসে। প্রথমে টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অবস্থান করে স্থানীয় মাদক কারবারিদের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে সেখানকার হোটেলে মজুদ করে।
তিনি বলেন, ইয়াবার বড় চালান বিভিন্ন কৌশলে সে ঢাকায় নিয়ে আসে। এ জন্য তার রয়েছে প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল। তার সহযোগিরা প্রাইভেটকারে করে প্রথমে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষন পরে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর মোটরসাইকেলে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় আসে।
তিনি আরও বলেন, মোটরসাইকেলে সে ট্রাভেলারের বেশ ধারণ করে, যাতে সহজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া যায়। এ পদ্ধতিতে সে বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান নিয়ে আসে বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। এসব তথ্য-উপাত্ত যাচাইবাছাই করে আমরা দীর্ঘদিন তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকি এবং সর্বশেষ জানতে পারি কক্সবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে মিরপুরের কালশী এলাকায় আসবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে রমনা ও গুলশান সার্কেলের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় কালশী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ডিএনসির এ কর্মকর্তা বলেন, মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে আসলে ২৫ হাজার ইয়াবা ও মোটরসাইকেলসহ ইয়াকুব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইয়াকুব কক্সবাজারে অবস্থান করে স্থানীয় মাদক কারবারিদের থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে মোটরসাইকেলে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং এ ইয়াবার চালান পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে রংপুরে নিয়ে যেত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ৭টি মাদক মামলা রয়েছে।
অপরদিকে একই দিন সকালে তেজগাঁও সার্কেলের অপর একটি দল ফার্মগেট এলাকা থেকে অপর একজন মাদক কারবারি নাঈমকে এক হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
এসজেএ/জেএইচ