ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২৩
নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে

ঢাকা: একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচন নির্বাচন খেলা হচ্ছে। এতে নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে।

নির্বাচন মানে বাছাই করে নেওয়ার প্রক্রিয়া। নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। মিনারেল ওয়াটারের সঙ্গে টেপের পানি দিলে সেটি নির্বাচন নির্বাচন হয় না।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ ও নির্বাচন মূল্যায়ন বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড, শাহদীন মালিক, প্রফেসর মোহাম্মদ সিকান্দার খান, প্রফেসর ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, শফিউদ্দিন আহমেদসহ সুজনের স্থানীয় প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন। এতে প্রার্থীদের মামলা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রার্থীর ওপর হামলা প্রভৃতি তুলে ধরা হয়।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পক্ষপাতদুষ্ট না হয়ে বিবেকের বিবেচনায় আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এগুলো আসলে নির্বাচন ছিল না। নির্বাচন হতে হলে সংজ্ঞা অনুযায়ী হতে হবে। নির্বাচন হলো চয়েস, রাইট, বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। নির্বাচন হলো অপর্চুনিটি, প্রিভিলেজইড টু চুজ এবং অলটারনেটিভ। যেখানে অলটারনেভটিভ থাকে না সেখানে নির্বাচন হতে পারে না, আমাদের নির্বাচন কমিশন যেমন ইলেকশনের পরিবর্তে পোলিং শব্দ ব্যবহার করেছে, তেমননিভাবে ‘ভোটাভুটি’ হয়।

তিনি বলেন, আমাকে যদি মিনারেল ওয়াটারের বিপরীতে সিদ্ধ পানি না দিয়ে ট্যাপ ওয়াটার দেওয়া হয়, নেব না। তাই এসব নির্বাচনে তো বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। নির্বাচন মানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। বর্তমানে রাজনীতির ব্যবসায়ীকরণ করা হয়েছে। ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোও রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছে। এজন্যই জিনিসপত্রে দাম বেড়ে যাচ্ছে, অর্থপাচার হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন গুরুতর অন্যায় করেছে। একজন প্রার্থী সিলেটে, যার বিদেশে অর্থ থাকলেও তিনি উল্লেখ করেনি। নির্বাচন কমিশন এগুলো খতিয়ে দেখেনি। নির্বাচনটা নির্বাচন কমিশনের হাত থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ছিল। ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে কিন্তু তারা নিস্ক্রিয় ছিল। জাতীয় নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ হবে তা কোনেভাবেই ধরে নেওয়া যায় না।

অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচনে এখন সাউথ আফ্রিকার কনসেপ্টটা ব্যবহার করা হচ্ছে। আফিকার ন্যাশনাল কংগ্রেস নব্বই দশক থেকে ক্ষমতায় আছে। এখন মোটামুটি তিরিশ বছর হয়ে গেছে। আফিকায় ২০,  ৩০, ৪০ বছর ক্ষমতায় আছে কয়েকটি দেশে। দক্ষিণ আফিকায় বলা হয় একটি দল রাষ্ট্রকে দখল করে ফেলেছে। আমরাও ওই পর্যায়ে চলে গেছি। একটা বিশেষ গোষ্ঠী তাদের সুযোগ-সুবিধা, ধন-সম্পদ প্রতিপত্তি বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র একটা বাহক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হলো নির্দষ্ট কিছু লোকের এ সুবিধাগুলো বৃদ্ধি করা। এ নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বাইরে যারা আছে, বিশেষভাবে সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ, তারা সযোগ-সুবিধা পায় না বরং বঞ্চিত হয়।

তিনি বলেন, প্রত্যেক কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র নির্বাচন নির্বাচন খেলা চালিয়ে যায়। এ খেলায় যাতে না হারে এতে পটু হয়ে যায়। চায়না, ইরান, কম্বোডিয়া, সাউথ আফ্রিকা যুগের পর যুগ একটা গোষ্ঠী নির্বাচনে জেতে। আমাদের নির্বাচনটা সেটিই হয়ে গেছে এবং কন্টিনিউ করবে।

তিনি আরও বলেন, মেয়রের পদ হলো প্রধান নির্বাহীর পদ, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর ক্ষমতা। তাদের ব্যবসা করার কথা আইনে নেই। কিন্তু এটি করতে হবে। সিটি করপেোরেশন মেয়র যদি ব্যবসা করে তবে ডিসি বেচারি কী দোষ করেছে, মন্ত্রীর ব্যবসা করতে আপত্তি কোথায়। এটি কেউ খেয়াল করছে না। কেননা, মেয়র হলে টাকা উপার্জন সহজ হয়। আয়-ব্যয়ের হিসাব তো যাচাই-বাছাই করা হয় না। এটিও লোক দেখানো ব্যাপার হয়ে গেছে। তাদের ব্যবসা করার সুযোগ থাকা উচিত না। এসব না করে নির্বাচন নির্বাচন খেলা খেলেই যাচ্ছি এসব দিকে নজর দেওয়া উচিত।

প্রফেসর মোহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, হলফনামা নিয়ে যদি নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখতো তাহলে ভালো হতো। সামনে নির্বাচন, মানুষের উৎসাহ খুব কম। সরকার পাঁচটি নির্বাচন করে দেখাতে চেয়েছে, যে নির্বাচনের খেলা নির্বাচনের মাঠে হবে। তবে এটির প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা যে দাবি করে, যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, নির্বাচন সামনে জমবে এ দাবিটা সঠিক নয়। নির্বাচনগুলো থেকে নতুন কিছু জানতে পারিনি। বরং পুরোনো জিনিসগুলো আরও শক্ত হয়েছে। সরকার এখনো সাজানোর ব্যাপারটা জারি রেখেছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে। ড. শাহদীন মালিকের ভাষায় নির্বাচন নির্বাচন খেলা হচ্ছে। ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে পুরো জাতি দেখেছে নির্বাচন কমিশন নিস্ক্রিয় ছিল। এটিও একটা ভূমিকা। যেটি কাঙ্ক্ষিত নয়।

তিনি আরও বলেন, যে নির্বাচনে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় না, সেটি গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের মুক্তিযু্দ্ধ হয়েছে আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য, ভোটাধিবার প্রতিষ্ঠার জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০২৩
ইইউডি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।