ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রেলে আগুন দিলে ছেঁকে ছেঁকে ধরে শাস্তি: প্রধানমন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
রেলে আগুন দিলে ছেঁকে ছেঁকে ধরে শাস্তি: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: বিএনপি ক্ষমতায় এসে রেল বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল এবং আন্দোলনের নামে রেলে আগুন দিয়েছিল। কিন্তু তারা আবার যদি রেলে আগুন দেয়, তবে ছেঁকে ছেঁকে ধরে শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) দুপুরে আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন রেলপথে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভার্চ্যুয়ালি তিনি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

রেলে আগুন দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা রাজনীতিতে বাধা দেবো না, বাধা দিচ্ছি না, কিন্তু তারা আবার যদি রেলে আগুন দেয় বা গাড়িতে আগুন দেয়, মানুষের কোনো ক্ষতি সাধন করে, তারা কিন্তু ছাড়া পাবে না। সব জায়গায় আমাদের ক্যামেরা থাকবে। একেবারে বেছে বেছে, ছেঁকে ছেঁকে ধরে ধরে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে, তারা মানুষের যদি কোনো ক্ষতি করে। এই আখাউড়া এলাকায় অনেক ক্ষতি করেছিল। আর যেন ক্ষতি করতে না পারে, সে বিষয়ে সবাই সতর্ক থাকবেন, সেই আবেদন আপনাদের কাছে।

তিনি বলেন, রেল এমন একটা চলাচল ব্যবস্থা, যেটা সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর একইসঙ্গে অল্প খরচে অনেক বেশি পণ্যও পরিবহন করা যায়, যাত্রীও পরিবহন করা যায়। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর এই রেল লাইন বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় এসে রেল বন্ধ করবে কেন, রেল লাভজনক না লোকসান। কাজেই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে এই রেল তারা বন্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপ নেয়। রেলের কর্মকর্তা কর্মচারীদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় দেয় কিন্তু তাদের পুরো টাকাও পরিশোধ করেনি। বিভিন্ন এলাকায় রেললাইন বন্ধ করে দেয়, সবই তারা বন্ধ করা শুরু করেছিল। ঠিক সেই সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।  

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা রেলকে উন্নত করার পদক্ষেপ নিই। দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই, রেলের আলাদা মন্ত্রণালয় না করে দিলে বাজেটে টাকা থাকবে না, আর রেলকে উন্নত করতে পারব না। অনেক প্রতিষ্ঠানই বিএনপি, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দিয়েছিল, আমরা এসে চালু করি, তার মধ্যে রেলও আছে। ১৯৯৮ সালে আমি যখন যমুনার ওপর সেতু নির্মাণ করি, এই সেতুর মূল নকশায় রেললাইন ছিল না। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই, এর সঙ্গে রেললাইন থাকতে হবে। তখনও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বাধা দিয়েছিল। বলেছিল ভায়াবল হবে না, আমি বলেছিলাম ভায়াবল হবে। আমরা বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে সেতু সংযোজন করি। মজার বিষয় হলো, যখন দেখল যে এটা খুবই ভায়াবল, তখন সেই ওয়ার্ল্ড ব্যাংকই টাকা দিল আলাদা ডেডিকেটেড রেল সেতু করার জন্য। আমার দেশ আমার চিন্তা, কী করলে দেশের মানুষের মঙ্গল হবে, সেভাবে কাজ করব।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন বিএনপি নির্বাচন হতে দেবে না, কারণ ২০০৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি সিট পেয়েছিল। কারণ, ২০০১ সাল থেকে তাদের দুঃশাসন, লুটপাট, সন্ত্রাস, অপকর্মের কারণে মানুষ তাদের ভোট দেয়নি, তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ১৩ সালে বিএনপি নির্বাচন হতে দেবে না, নিজেরাও করবে না। আসলে ২০০৮ এর নির্বাচনে তারা ভোটই পায়নি, আর ওই নির্বাচন নিয়ে তো কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল। শুরু হয়ে গেলো আগুন সন্ত্রাস, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। বাস, গাড়ি চলছে, আগুন দিচ্ছে, প্রাইভেট কার, সিএনজিতে আগুন দিচ্ছে, আর রেল। নতুন নতুন বগি কিনেছি, রাস্তা করেছি, তাতে আগুন দেয়। প্রায় ২৯টি জায়গায় তারা রেলে আগুন দেয়, বগি ও ইঞ্জিন ধ্বংস করে। আসলে বিএনপি হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী দল, সন্ত্রাস ছাড়া কিছু বোঝে না।  

তিনি বলেন, এই দলের (বিএনপি) সৃষ্টিকর্তা জিয়াউর রহমান, ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করার সঙ্গে সে জড়িত, জাতীয় চার নেতা হত্যার সঙ্গে জড়িত। সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা যারা অফিসার ছিলেন, একে একে তাদেরকে হত্যা করে। তার স্ত্রী যখন ক্ষমতায় আসে, সে এই মানুষ খুন করা ছাড়া আর কিছু বুঝত না। এই সন্ত্রাসী দল, তাদের কাজই হচ্ছে ধ্বংস করা। তিন হাজার ৮২৪টি বাস, গাড়ি, ট্রাক তারা পুড়িয়েছে। যাত্রীসহ, ড্রাইভারসহ, হেলপারসহ, পুড়ে কাঠ হয়ে গেছে। আর সেইসঙ্গে রেল, লঞ্চ, সরকারি অফিস, ভূমি অফিস পুড়িয়েছে। অর্থাৎ ধ্বংস করা, সেই সাথে প্রায় ২০ হাজার গাছ তারা কেটেছে। এই ধ্বংস করাটাই নাকি তাদের আন্দোলন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারাটা তাদের আন্দোলন। এই রেলকে আবার তারা ধ্বংস করতে চেয়েছিল।  

সরকার প্রধান বলেন, একটা কথা স্পষ্ট আমি বলতে চাই, আজ বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ করে দিয়ে জনগণকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে বলেই কিন্তু আজ এই কাজগুলো করতে পেরেছি। কাজেই জনগণকে বলব সন্ত্রাসী বিএনপি-জামায়াতের হাত থেকে তারা যেন নিজেদের রক্ষা করে, এদের সম্পর্কে যেন সচেতন থাকে, কারণ এরা ধ্বংস করতে জানে, এরা সৃষ্টি করতে জানে না। এরা মানুষকে কিছু দিতে পারে না, এরা লুটপাট করতে পারে, দুর্নীতি করতে পারে, নিজেদের আখের গোছাতে পারে। মানি লন্ডারিং করতে পারে, খালেদা জিয়ার ছেলের মানি লন্ডারিংয়ের ৪০ কোটি টাকা আমরা উদ্ধার করেছি। আরও ওদের অনেকের টাকা ফ্রিজ হয়ে আছে বিভিন্ন দেশে, আমরা সেগুলো আনার চেষ্টা করছি। লুটপাট, সন্ত্রাস, বোমাবাজি ছাড়া আর কিছু পারে না। এদের হাত থেকে দেশবাসী রক্ষা পাক সেটাই আমরা চাই।

রেলের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ও উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে রেলের প্রভূত উন্নতি সাধান করি। এই যে জ্বালানো-পোড়ানো, এই ক্ষতি থাকার পরও ইতোমধ্যে ৭৪০ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন নির্মাণ, ১২৬টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ, ৫৩২টি নতুন রেল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ১১১টি লোকোমোটিভ, ৫৬৮টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ, ৫৩৬টি মালবাহী ওয়াগন সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৪৩টি নতুন ট্রেন চালু করেছি। কক্সবাজার রুটে রেললাইন নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য, পদ্মা সেতু থেকে একেবারে বরিশাল, ঝালকাঠি থেকে শুরু করে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে রেললাইন সম্প্রসারণ করব। সমীক্ষার কাজ চলছে, এখানে মাটি খুব নরম। আর অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল সেখানে, একটু সময় লাগছে, তবুও এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে, ভবিষ্যতে আমরা এটা করতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি।

তিনি বলেন, আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের ট্রেন চলাচলের ৭২ কিলোমিটার মেইন লাইন, ৪৬ কিলোমিটার লুপ ও পাইলিং লাইনসহ প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ শেষ হয়েছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এই লাইনে গতিবেগ সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার। রেলে আমরা গতি এনে দিয়েছি, কিন্তু চালকদের অনুরোধ করব যে, খুব বেশি ঘনবসতি, যেখানে মানুষ হাঁটাচলা করে, ট্রেন চালানোর সময় অবশ্যই স্পিড কম করে চালালে ভালো হবে, সুরক্ষিত থাকবে আশেপাশের মানুষ। সেটা মাথায় নিয়ে একটু ধীরেই চালাবেন, তাতে খুব একটা ক্ষতি হবে না। যারা চালাবেন, তাদের প্রতি আমার এই একটা অনুরোধ থাকল। রেল দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে।

রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবির। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে পতাকা নেড়ে এবং বাঁশি বাজিয়ে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০২৩
এসকে/আরএইচ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।