ঢাকা: জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুটি অভিযোগে নয় বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (০২ আগস্ট) ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান এ রায় দেন।
তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তারেক রহমান, ডা. জোবাইদা রহমান ও তার মা বেগম আঞ্জুমান বানুকে তাদের অবৈধ উপার্জন এবং সম্পদের উপার্জন সম্পর্কে নোটিশ দেয়। তারেক রহমান কারাগারে থাকাকালীন অবস্থায় এ নোটিশ গ্রহণ করেন এবং সম্পদের বিবরণ দাখিল করেন। তিনি যে সম্পদের বিবরণ দাখিল করেছেন, সেখানে দুই কোটি ২৩ লাখ টাকার তথ্য গোপন এবং ৫৮ লাখ টাকা অবৈধ উপার্জনসহ মোট দুই কোটি ৭৪ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, মামলাটি যদিও চার কোটি ৭৪ লাখ টাকা দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে দুই কোটি ৭৪ লাখ টাকায় সমাপ্ত করেছেন। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী এবং শাশুড়িকে দুটি অভিযোগে অত্র আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে তারা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের সমন, ওয়ারেন্ট ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়। এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তারেক রহমান এবং জোবাইদা রহমান কেউই আদালতে উপস্থিত হননি। আমরা দুদকে পক্ষে তারেক রহমানের উপস্থিতির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করি। ২০০৭ সালে এ মামলাটি শুরু হলেও এটি আজকে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৩ সালে এসে সমাপ্তি হয়েছে।
দুদক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের অবহেলা ও অনুপস্থিতির কারণে আমরা এ মামলাটির ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনকে হাজির করতে পেরেছি। আজ আদালত সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যবেক্ষণ ও প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্কের আলোকে রায় ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, ২৬ (২) ধারায় তারেক রহমানকে তিন বছরের সাজা ও ২৭ (১) ধারায় তাকে ছয় বছরের সাজাসহ মোট নয় বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এ সাজাগুলো একত্রে চলবে। পাশাপাশি তাকে তিন কোটি টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। দুই কোটি ৭৪ লাখ টাকার যে সম্পদ পাওয়া গেছে, সেটি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তারেক রহমানকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতা করার অপরাধে দণ্ডবিধির ১০৯/২৭ (১) ধারায় ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে তাকে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিএনপন্থি আইনজীবীদের এ রায়কে ‘ফরমায়েশি’ রায় বলে অভিযোগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর আমরা এ মামলার বিচারের কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এ মামলা হওয়ার পর থেকে তারা (বিএনপিপন্থি আইনজীবী) একই ভাঙা ক্যাসেট বাজাচ্ছেন। এখানে ফরমায়েশির কোনো কিছু নেই। তাকে (তারেক রহমান) তো উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। তিনি উপস্থিত হননি কেন? তিনি উপস্থিত না হয়ে আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন আর বলবেন ফরমায়েশি রায়।
তিনি বলেন, আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে তারেকের উপস্থিত না হওয়াকে দুঃখজনক ব্যাপার বলে অবহিত করেছেন। আদালত বলেছেন, তাকে বারবার হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি হাজির হলে তার পক্ষের বক্তব্যগুলো আমরা শুনতে পারতাম। তার পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার জন্য তার আইনজীবী মাসুদ সাহেব হাজির হয়েছিলেন এবং আবেদন দিয়েছেন। কিন্তু আইন আমলে যেহেতু এটি গ্রহণ করা যায় না, তাই তাকে সুযোগ দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২৩
এসসি/আরআইএস