ফরিদপুর: রাকিবুল ইসলাম নামে ফরিদপুরের ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তার রোষানল থেকে বাঁচতে জীবনের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবি জানান ছামাদ খান (৩৬) নামের এক ব্যক্তি।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মধুপর গ্রামের বাসিন্দা ছামাদ নিজেকে হারবাল ওষুধ ব্যবসায়ী কখনওবা রেন্ট-এ-কারের ব্যবসায়ী পরিচয় দেন।
শুক্রবার (৪ আগস্ট) ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ফরিদপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক সংবাদ সম্মেলন করে ছামাদ অভিযোগ করেন, ডিবির ওসি রাকিবুল ইসলাম তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন, মিথ্যা মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।
তবে পুলিশের দাবি, ছামাদ হারবাল ওষুধ ব্যবসার আড়ালে মাদকের কারবার করেন। নিজের একটি মাইক্রোবাস দিয়ে মাদক চালান দিয়ে আসছেন তিনি। মাদক ব্যবসাকে আড়াল করার জন্য মূলত তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এ মিথ্যা অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানায় ফরিদপুর জেলা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ছামাদের বিরুদ্ধে মধুখালী থানায় মাদকসহ চারটি মামলা রয়েছে।
শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সম্মেলন করে জেলা পুলিশ।
সেখানে ছামাদের আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন অভিযুক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান।
তিনি বলেন, ছামাদ খানের সঙ্গে ডিবির ওসি রাকিবুল ইসলামের পরিচয় ২০১৭ সালে একটি মামলার মাধ্যমে। যেই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ওসি রাকিবুল। নারী নির্যাতনের মামলায় ছামাদ খান আসামি হওয়ায় পূর্ব থেকেই তদন্তকারী কর্মকর্তা রাকিবের সঙ্গে ছামাদের বিরোধ ছিল।
এসপি শাহজাহান সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, সামাদের নামে মধুখালীতে ২০১৭ সালে একটি মাদকের মামলা রয়েছে। সে সময় র্যাব তার হেফাজত থেকে ৩ হাজার ১৫০ পিস ইয়াবা, এক বোতল ফেনসিডিল, দুই বোতল বিদেশি মদ জব্দ করে।
এসপি জানান, ছামাদের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মধুখালীতে একটি মামলা আছে। র্যাব তার থেকে ২৩ বোতল যৌন উত্তেজক সিরাপ এবং ৬৯০ পিসে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট উদ্ধার করে।
মধুখালী থানাতে ছামাদের নামে সরকারি কর্মচারীর ছদ্মবেশে প্রতারণার আরেকটি মামলাও আছে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
মাদক মামলা থেকে বাঁচতেই ছামাদ খান ওই সংবাদ সম্মেলনে করে ডিবির ওসি রাকিবুল ইসলামের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছেন বলে দাবি করেন এসপি মো. শাহজাহান।
অন্যদিকে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সম্মেলন করে জেলা পুলিশ।
ছামাদ খানকে দুশ্চরিত্র ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, মধুখালীতে তার নামে নারী নির্যাতনের মামলা আছে। তিনি নিজের শালিকাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তার শ্বশুর থানায় এসে অভিযোগ দিলে পুলিশের সহায়তায় মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। মধুখালী থানায় সামাদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা হয়। ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে মামলাটি করে।
এসপি মো. শাহজাহান বলেন, ছামাদ খানের একটি নোহা মাইক্রোবাস আছে, যার রেজিঃ নং-ঢাকা মেট্রো-চ-৫৩-১০২০। তিনি ওই মাইক্রোবাস দিয়ে মাদকের ব্যবসা চালাতেন।
১৯ জুলাই ওই মাইক্রোবাস থেকে ৩ হাজার ৫৮২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রুজু হয়।
মধুখালীতে হারবাল ওষুধের দোকান দিয়ে আড়ালে ছামাদ যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন অবৈধ ওষুধ বেচতেন বলে দাবি করেন এসপি শাহজাহান।
মাদক ও অবৈধ ওষুধ ব্যবসা করে প্রচুর টাকার মালিক বনে যান ছামাদ।
পুলিশের ওই এসপির দাবি, সমাজের সব মহলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে ছামাদ তার এসব অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে এসেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করে ও প্রেস ব্রিফিং করে নিজের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করে থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইমদাদ হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শৈলেন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শেখ মো. আব্দুল্লাহ বিন কালাম, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম, এ জলিলসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন >> পুলিশ কর্মকর্তার রোষানল থেকে বাঁচতে চান ছামাদ
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২৩/
এসএএইচ