ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় জাকারিয়া ফকির হত্যা মামলার প্রধান আসামি মোরাদ মোল্যার (৫৫) বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বাদী ও তার স্বজনদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নিহতের পরিবারের স্বজনরা।
সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চাপুলিয়া গ্রামের মৃত হারুন ফকিরের ছেলে জাকারিয়া ফকিরের সঙ্গে স্থানীয় বিরোধের জেরে একই এলাকার মোরাদ মোল্যার দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল। ওই বিরোধের জেরে গত ২০২০ সালের ২৮ মার্চ মোরাদ মোল্যার নেতৃত্বে ৩০-৪০ জন ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জাকারিয়া ফকিরের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
পরে প্রত্যক্ষদর্শীরা আহত অবস্থায় উদ্ধার করে জাকারিয়াকে প্রথমে ফরিদপুর পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘটনার দুইদিন পর ৩০ মার্চ সকালে জাকারিয়া মারা যায়।
ভুক্তভোগীদের বাড়িতে গেলে এ প্রতিবেদকের কাছে নিহতের পরিবারের স্বজনরা নানা শঙ্কা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা জানান। এ ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩২ জনকে অভিযুক্ত করে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ মামলার ১১ জন এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। মামলার এজাহারভুক্ত ১৮ জন আসামি স্বেচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরমধ্যে ৮ জন আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে পাঁচজন আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আদালতে। পরে তাদের জবানবন্দির ভিত্তিতে আরও ৮ জনের বিরুদ্ধে পেনাল কোড রুজু করা হয়।
বর্তমানে হত্যা মামলার সব আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় রয়েছেন। এরপর থেকেই হত্যা মামলার মাস্টারমাইন্ড মোরাদ মোল্যার নেতৃত্বে আরও কয়েকজন আসামি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য মামলার বাদী, নিহতের দুই ভাই, বোন ও তাদের মাকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি তার পাশাপাশি নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে আসামি পক্ষের লোকজন। এ কারণে মামলার বাদী ও তার পরিবারের লোকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
নিহত জাকারিয়ার বৃদ্ধা মা তাসলিমা বেগম (৬৪) এখনো শোকে কাতর। ছেলে হারানোর সেই করুণ আর্তনাদ আজও শেষ হয়নি। মরার আগে ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখে যেতে চান তিনি। এরজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নিহত জাকারিয়ার ভাই জিয়াউর রহমান বলেন, আসামি মুরাদ মোল্যার নেতৃত্বে আরও কয়েকজন আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের নানা রকম হুমকি দিয়ে আসছে। তাদের গরু দিয়ে আমাদের ফসলের ক্ষেত নষ্ট করছে। আমি নিষেধ করতে গেলে তারা আমাকে মারধর করার হুমকি দিয়েছে। এখন আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় আছি। দ্রুত বিচার আইনে ভাই হত্যার বিচার চাই।
জাকারিয়ার বোন শরিফা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আমি শ্বশুর বাড়ি থাকি। মাঝেমধ্যে বাবার বাড়িতে আসার পথে মুরাদ মোল্যা আমাকেও বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখান।
নিহতের পরিবারকে হুমকি ব্যাপারে হত্যা মামলার আসামি মোরাদ মোল্যা জানান, আমি এখন বাড়িতে থাকি না। আমি লোহাগড়া থাকি। তাই বাদীর পরিবারকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারকে হুঁমকি-ধামকি দিলে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২৩
এসএম