ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

টাঙ্গাইলে স্যালাইনের সংকট, কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৩
টাঙ্গাইলে স্যালাইনের সংকট, কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের পর্যাপ্ত নরমাল স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ না করায় বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে করে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভর্তিকৃত রোগীদের স্বজনরা।

 

তারা বলছেন, ১শ টাকার স্যালাইন বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে ৩শ থেকে ৪শ টাকায়। তবে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন তাদের পর্যাপ্ত স্যালাইন এবং ওষুধ মজুদ রয়েছে। রোগীদের চাহিদামতো তা সরবরাহ করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নয় তলায় গিয়ে দেখা যায় রোগীদের চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বরত এক নার্স জানান, বর্তমানে সপ্তাহে রোগীদের জন্য ১০০টি নরমাল স্যালাইন বরাদ্দ দেওয়া আছে। তবে ১৫ দিন আগেও সেই সংখ্যা ছিল ৫০০টি। হঠাৎ করেই বরাদ্দের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছেন তারা। তাই বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা বাইরে থেকে দ্বিগুণ দাম দিয়ে স্যালাইন কিনে আনছেন।

আনোয়ার মিয়া নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তার স্ত্রীকে সকালে ভর্তি করিয়েছেন। চিকিৎসক তাকে ডিএনএস নামের একটি স্যালাইন দিতে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়েছেন। কিন্তু স্যালাইন হাসপাতাল থেকে সরবরাহ না করায় বাইরে থেকে সাড়ে ৩শ টাকায় কিনে এনেছেন। যার প্রকৃত মূল্য ১০০ টাকা। মোশারফ হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি জানান, তার চাচাকে শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাকেও স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। তবে বাইরে থেকে ১০০ টাকার স্যালাইন কয়েক দোকান ঘুরে তিনি ৪শ টাকায় কিনে এনেছেন।

ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্য দেওয়া হচ্ছে ডিএনএস স্যালাইন। এবার সেই স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে ওষুধের দোকানগুলোতে। কেউ কেউ বলছেন, স্যালাইন স্টক আউট, আবার কেউ বলছেন সিন্ডিকেট করেছেন স্যালাইন কোম্পানিগুলো। এসব বাহানায় চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ডিএনএস স্যালাইন।

লিয়াকত আলী নামে রোগীর এক স্বজন জানান, সবার কাছেই কমবেশি স্যালাইন মজুত আছে। কিন্তু তারা বলে স্যালাইন নাকি শেষ। অন্য জায়গা থেকে ম্যানেজ করে দিতে পারবে বলে জানায় তাকে। যাতায়াত খরচ বেশি যাচ্ছে বলে ১শ                                                                                                                                                                              টাকার স্যালাইন ৩শ থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। চাহিদা থাকায় দোকানিরা যার কাছ থেকে যেমন পারছে নিচ্ছে। কেউ কিছু বলছেও না। আমরা যারা রোগী নিয়ে হাসপাতালে এসেছি তাদের তো বেশি টাকা দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এাছাড়া ওষুধ কেনার পর রিসিটও দেওয়া হয় না। রিসিট দেওয়ার কথা বললে অন্য জায়গা থেকে কিনতে বলে দোকানিরা।

টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল গেটের সামনের নিউ মেডিসিন ওয়ার্ল্ড এর এক কর্মচারী বলেন, স্যালাইনের সাপ্লাই নেই। আমরা অনেক দূর থেকে নিয়ে আসি। এ জন্য দাম কিছুটা বেশি রাখি। কারণ, কারও না কারও তো লাগবেই। এটা নিয়ে আবার দুদিন ঝামেলাও হয়েছে। এজন্য এখন আর বিক্রি করি না। যে আসে বলি নেই। কারও লাগলেও কিছু করার নাই। তবে আশপাশে কয়েকজন আছে, বললে তারা দূর থেকে নিয়ে আসে। এ জন্য তারা বেশি দাম রাখে। এখন যার দরকার হয় সে অল্প আর বেশি দাম হোক, স্যালাইন কিনবেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, যে স্যালাইন ও ওষুধ সরকারিভাবে রোগীদের বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে, সেটি যদি সঠিকভাবে সরবরাহ করা হয় তাহলে রোগীরা অনেক উপকৃত হত। তাদের বাইরে থেকে স্যালাইন বা ওষুধ কম কিনতে হত।

জরিনা বেগম নামে এক নারী জানান, তার স্বামীকে মঙ্গলবার সকালে ভর্তি করেছেন। ভর্তির পর চিকিৎসক জানিয়েছেন তার স্বামীকে স্যালাইন দিতে হবে। হাসপাতাল থেকে স্যালাইন না পেয়ে তিনি বাইরে থেকে ৩শ টাকায় একটি স্যালাইন কিনে এনেছেন। এছাড়া ক্যানোলাও ৩৫ টাকা দিয়ে বাইরে থেকে কিনে এনেছেন।

টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুছ জানান, প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ২৭০জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাদের কাছে পর্যাপ্ত স্যালাইন বা ওষুধ মজুদ রয়েছে। চাহিদা মোতাবেক রোগীদের স্যালাইন ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। রোগীরা হাসপাতাল থেকে স্যালাইন না পেয়ে বাইরে থেকে কিনে আনছেন এ বিষয়টি পুরোপুরি সত্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।