ঢাকা: অস্থায়ী প্রধান প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক (সিইএসএস) দিয়েই চলছে নৌ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নৌ পরিবহন অধিদপ্তর। বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশল প্রশিক্ষক মো. মনজুরুল কবীর প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর যাবত এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মনজুরুল কবীর প্রধান প্রকৌশলীর অস্থায়ী দায়িত্বের বাইরে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। অভ্যন্তরীণ নৌযান চালকদের যোগ্যতা নির্ধারণী (ইনল্যান্ড ড্রাইভারশিপ) পরীক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, উপকূল অতিক্রমকারী (বে-ক্রসিং) জাহাজের অনাপত্তি সনদ (এনওসি) দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং নৌযানের নকশা অনুমোদন কমিটির প্রধান তিনি। এর বাইরে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের পরীক্ষাও নিয়ে থাকেন মনজুরুল কবীর।
একাধিক সূত্র মতে, এর আগে এ কর্মকর্তার এসব দায়িত্ব পালনের ন্যূনতম অভিজ্ঞতা ছিল না। তা সত্ত্বেও ভিন্ন সংস্থার একজন কর্মকর্তাকে দীর্ঘদিন নৌ অধিদপ্তরে বহাল রেখে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে অনভিজ্ঞ হলেও অভ্যন্তরীণ নৌযান সার্ভে, নকশা অনুমোদন, বে-ক্রসিংয়ের ছাড়পত্র প্রদান ও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষায় অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মনজুরুল কবীরের বিরুদ্ধে। ফলে সাধারণ নৌযান মালিকসহ নৌশ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতা, নৌচালক ও নাবিক পরীক্ষার্থী এবং নতুন জাহাজ নির্মাণে আগ্রহীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলাম দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেপ্তার ও সাময়িক বরখাস্ত হন। এরপর নৌ বাণিজ্য দপ্তর, চট্টগ্রামের তৎকালীন মুখ্য কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামকে প্রধান প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। তবে কিছুদিনের মাথায় তাকে সরিয়ে নৌ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক এস এম নাজমুল হককে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পাওয়ার সাড়ে আট মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল নাজমুল হককেও গ্রেপ্তার করে দুদক। এরপর মন্ত্রণালয় তাকেও সাময়িক বরখাস্ত করে। এর কয়েকদিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশল প্রশিক্ষক মনজুরুল কবীরকে অস্থায়ীভাবে প্রধান প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক পদে নিয়োগ দেয় নৌ মন্ত্রণালয়। তখন থেকেই এ পদে বহাল আছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থায়ী প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগে দীর্ঘদিন আইনি বাধা ছিল। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ফখরুল ইসলাম ছিলেন সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) মাধ্যমে পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী। তার চাকরির মেয়াদ শেষ কিংবা তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত না করা পর্যন্ত এ পদে কাউকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ ছিল না। যেহেতু তার বিরুদ্ধে করা দুদকের মামলা আদালতে বিচারাধীন, সেহেতু তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে পারেনি সরকার।
তবে ফখরুল ইসলামের সরকারি চাকরির বয়সসীমা গত ১ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। এর ফলে সেই আইনি বাধা এখন আর নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব থেকে মনজুরুল কবীরকে গত ৯ মাসেও সরানো হয়নি। ভিন্ন সংস্থার একজন কর্মকর্তা বছরের পর বছর অস্থায়ীভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদটি আঁকড়ে রাখায় অধিদপ্তরের পদোন্নতিযোগ্য প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারকরা চরম ক্ষোভ ও হতাশায় ভুগছেন।
জানতে চাইলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেন, আইনি বাধা দূর হওয়ায় প্রধান প্রকৌশলী পদে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া উচিত। এতে অধিদপ্তরের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, গতিশীলতা বাড়বে এবং সংস্থার নিজস্ব কর্মকর্তারা উৎসাহ পাবেন।
সাবেক এই প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ভিন্ন সংস্থার কাউকে দীর্ঘদিন এভাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হলে মূল সংস্থার পদোন্নতিপ্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে পড়েন এবং এতে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রকৌশলী মতিউর রহমান আরও বলেন, নৌ মন্ত্রণালয়ের উচিত নৌ অধিদপ্তরের উপযুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে কাউকে প্রধান প্রকৌশলী পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া এবং পরবর্তীতে এসএসবির সভায় পদোন্নতির মাধ্যমে স্থায়ীকরণ। যদি পদোন্নতিযোগ্য কেউ অধিদপ্তরে না থাকেন, সে ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে স্থায়ী নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
টিএ/এমজেএফ