ঢাকা: বিভিন্ন মহলের আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় মতামত নেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ। আগামী সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয়ে আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।
চলতি সপ্তাহে আইনের খসড়াটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত প্রদান সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি তা চূড়ান্ত করবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’এর খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত প্রদান সংক্রান্ত কমিটির জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। এই কমিটির সভা আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে পাঠানো সার-সংক্ষেপে বলা হয়, রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সরকারি-বেসরকারি সব শিল্প কারখানার প্রক্রিয়া ও উদ্ভাবনী তথ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত দেশীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির গোপনীয় তথ্যের সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, ব্যবহার বা পুনঃব্যবহার, হস্তান্তর, প্রকাশ, বিনষ্টকরণ ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিধান করার আবশ্যকতা এবং উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কার্যাবলি তত্ত্বাবধান ও পরিবীক্ষণের জন্য বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থায় একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তার আলোকে এ সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন এবং এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে 'ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩ -এর একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।
সার-সংক্ষেপে আরও বলা হয়, আইনটি প্রণীত হলে উপাত্ত সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত বা ধারন, অভিযোজন, পরিবর্তন, প্রত্যাবর্তনসহ অন্যান্য বিষয়ের নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে দেশের ডিজিটাল সেক্টরের উন্নয়নের পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আইসিটি বিভাগ জানায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন'-এর খসড়া প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সময়ে সভা, কর্মশালা, একাধিকবার ওয়েবসাইটে প্রদর্শনের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মতামত গ্রহণ, বিভিন্ন অংশীজন, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা ও সিভিল সোসাইটির সাথে আলোচনার ভিত্তিতে মতামত গ্রহণ এবং সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খসড়াটি সংশোধন করা হয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা প্রস্তাবিত আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে পরামর্শ দিয়েছেন।
‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’এর খসড়া পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ’ থেকেও প্রমিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে অংশীজন মতবিনিময়ের মাধ্যমে আইনটির খসড়া পুনরায় পরিমার্জন করা হয়।
খসড়া ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩’এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো- উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কার্যাবলি তত্ত্বাবধান ও পরিবীক্ষণের জন্য বিদ্যমান প্রশাসনিক ব্যবস্থায় একটি নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা স্থাপন নিশ্চিত করা। জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে উপাত্তের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কোনো ব্যক্তির উপাত্ত সুরক্ষা ও এর প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কার্যাদি নিয়ন্ত্রণ ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান করা। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত উপাত্ত সুরক্ষার নীতিগুলো অনুসরণক্রমে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে মুক্ত বাণিজ্যের প্রসার ও বিস্তৃতি ঘটানোর ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উপাত্তের ব্যবহার নিশ্চিত করা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, এসব পরিপ্রেক্ষিতে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০১৩' প্রণয়নের লক্ষ্যে বর্ণিত আইনের খসড়ার ওপর মতামত প্রদানের জন্য আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত প্রদান সংক্রান্ত কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে।
আইসিটি বিভাগ আরও জানায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী সারসংক্ষেপটি দেখেছেন, অনুমোদন করেছেন এবং আইনের খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত প্রদান সংক্রান্ত কমিটির কাছে উপস্থাপনের সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
আইনটির মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যের নিয়ন্ত্রণ না করে সুরক্ষা নিশ্চিতে ঢেলে সাজানোর তাগিদ টিআইবি। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইনটিতে ব্যক্তিগত তথ্যের সংজ্ঞা পরিষ্কার ও পর্যাপ্ত নয়। সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা না থাকার ফলে ভুল ও অপব্যাখ্যার সুযোগ থাকবে এবং ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ হবে। এই কারণে আইনটির দুর্বলতা থেকে যাবে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপব্যবহৃত হওয়ার সুযোগ থেকে যাবে। ব্যক্তিগত তথ্যের যে সংজ্ঞা ও পরিধি প্রস্তাব করা হয়েছে, সেই আলোকে খসড়াটি সংশোধন করতে হবে এবং আইনটির শিরোনাম পরিবর্তন করে ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন-২০২৩’ করতে হবে। আইনটির পরিধিতে ব্যক্তিগত তথ্যের বাইরে অন্য কিছু থাকার কথা নয়। বিষয়বস্তুর গুণগত কোনো পরিবর্তন ছাড়া, শুধুমাত্র নাম পরিবর্তন করা হলে-তা খোলস পরিবর্তনের ঘটনা ঘটবে, যা আইনটির গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
খসড়া আইনের বিভিন্ন ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খসড়ায় যেসব ক্রটিপূর্ণ ধারা আছে সেগুলো সংশোধন না করলে আইনটিতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার বদলে ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরি হবে, যেটি সরকার নিজেও চাইবে না, জনগণও চাইবে না। উপাত্ত সুরক্ষা আইন জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। আইনটি প্রণয়নে সাইবার নিরাপত্তা আইনের মতো যেন তাড়াহুড়ো করা না হয়। আইনটি সংসদে চূড়ান্তভাবে প্রণয়নের আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
এমআইএইচ/এএটি