ঢাকা, শনিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অবৈধ বালুর স্তূপে ‘শ্রী’ হারাচ্ছে শ্রীমঙ্গল, প্রশাসন নীরব

ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩
অবৈধ বালুর স্তূপে ‘শ্রী’ হারাচ্ছে শ্রীমঙ্গল, প্রশাসন নীরব শ্রীমঙ্গল বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের পাশেই বালুর স্তূপ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে শহরেই দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু স্তূপ করে চলছে ব্যবসা। শহরের ব্যস্ততম সড়কের পাশে এমন বালুর স্তূপ থেকে বালু পরিবহণেও রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

এ যেন নাকের ডগায় ক্ষত! অবৈধ বালুর স্তূপে শ্রী হারাচ্ছে পর্যটননগরী শ্রীমঙ্গল।  

স্থানটি বালু বিপণন কেন্দ্র হিসেবেও সরকারিভাবে লিপিবদ্ধ বা ইজারাভুক্ত নয়। অবৈধ এই বালু বিক্রয়ের স্থানটির ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনকে এখনো সরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি।

সম্প্রতি দেখা গেছে, শ্রীমঙ্গলের ১০নং ভানুগাছ রোডে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর অফিসের সামনে এবং মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জ, শ্রীমঙ্গলের রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশেই এই বালুর হাট। শুকনা-ভেজা উভয় প্রকারের বালুই একত্রিত করে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এখানে বালুর বিক্রিবাট্টা।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার নানান ছড়া থেকে বালু তুলে এনে এখানে স্তূপ করে রাখা হয়। এরপর ক্রেতাদের সঙ্গে দরদামের পর তাদের নেমপ্লেটবিহীন ৩ টনের গাড়ি দিয়ে সেগুলো ক্রেতার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। ফিটনেসবিহীন এই গাড়িগুলোকে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত গতিতে চলাচল করতে দেখা যায়।

পর্যটন ব্যবসা নিয়ে শ্রীমঙ্গলে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তানভীর সরকার লিংকন। তিনি ‘শান্তিবাড়ি ইকো রিসোর্ট’ এর নির্বাহীপ্রধান।  

শহরের নাকের ডগায় এই বালুর স্তূপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গল শহর থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পথে বের হলেই এ বালুর স্তূপ চোখে পড়ে। দিনের পর দিন এখানে বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। শ্রীমঙ্গল এমনিতেই নানান কারণে দিনে দিনে তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। পর্যটননগরী হিসেবে শ্রীমঙ্গলকে সবসময় দৃষ্টিনন্দন করে রাখা আমাদের সকালের দায়িত্ব। শহরের বিশেষ বিশেষ স্থানগুলোতে সৌন্দর্যবর্ধন স্থাপনা তৈরি করা যেতে পারে। যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। এগুলো না করে পরিবেশবিরোধী এভাবে বালুর স্তূপ করে রাখা আমাদের অসুন্দর দৃষ্টিভঙ্গিরই বহিঃপ্রকাশ।    

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জের শ্রীমঙ্গল রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু কি বালু! এই এলাকার যত ময়লা-আবর্জনা এবং ভাগাড়ের দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস আছে সব এনে আমাদের অফিসের সামনে ফেলে দেয়। এটা কোনো কথা বলেন তো?’

সওজ মৌলভীবাজারের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সড়ক উপ-বিভাগ শ্রীমঙ্গল) আরিফ হোসেইন বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যাপারটি আমি জানানো।

চা-শিল্প শ্রম কল্যাণ বিভাগের বিভাগীয় শ্রম দপ্তর, শ্রীমঙ্গলের উপ-পরিচালক(ডিডি) মোহাম্মদ নাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের অফিসের সামনেই বালু স্তূপ করে রাখে। বিষয়টি শুধু যে দৃষ্টিকটু তা নয়, দুর্ঘটনার কারণও হতে পারে। একবার আমাদের অফিস থেকে আমার গাড়ি বের হওয়ার সময় বালু স্তুপের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের সঙ্গে প্রায় ধাক্কা লাগতে যাচ্ছিল। অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাই। ’

শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী রেঞ্জ অফিসের পাশেই বালুর স্তূপ।  ছবি: বাংলানিউজ 

তিনি আরও বলেন, ‘তাছাড়া শ্রীমঙ্গল যেহেতু একটি পর্যটননগরী এলাকা এর প্রতিটি স্থানসমূহকে সুন্দর এবং দৃষ্টিনন্দন করে রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। যিনি ওখানে বালু স্তূপ করে রেখে বালুর ব্যবসা করছেন উনারও দায়িত্ব কিন্তু শ্রীমঙ্গলের ‘শ্রী’ কে নষ্ট না হতে দেওয়া। এ বিষয়টি যেহেতু পর্যটননগরীর সৌন্দর্যের হানি ঘটাচ্ছে তাহলে উচিত বালুগুলোকে বিকল্প স্থানে সরিয়ে নিয়ে রাখা। তাহলেই তা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। ’

অবৈধভাবে দিনের পরে দিন বালু স্তূপ করে রাখার বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সদ্বীপ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরেও এসেছে। আমি দেখব। ’ 

বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩
বিবিবি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।